স্ত্রীর গহনা বন্ধক দিয়ে সাগরে, এক জালেই পেলেন ৫৪ লাখ টাকার মাছ

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার জেলে আবুল খায়েরের সাগরে ইলিশ ধরতে যাওয়ার জন্য হাতে কোনো টাকাই ছিলো না। বাধ্য হয়েই স্থানীয় মহাজনের কাছে স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে আট লাখ টাকা ধার নেন তিনি। সেই টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ সাগরে ট্রলার ভাসান। জাল ফেলার পর প্রথম টানেই ১৭০ মণ ইলিশ পেয়েছেন তিনি।

যার বাজার মুল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি। কুয়াকাটা সংলগ্ন মৎস্য বন্দরে বিগত ইলিশ মৌসুমের রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন আবুল খায়ের। জেলে আবুল খায়েরের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতি এলাকায়। মহিপুর মৎস্য বন্দরের ব্যবসায়ী মিঠুন ফিশ নামে একটি আরতে ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এই মাছ বিক্রি হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এমন ঘটনায় মহিপুর মৎস্য বন্দরে খুশির আমেজ দেখা দিয়েছে।

এফবি রিভারমেট নামে ওই ট্রলারের জেলে ইউনুস মাঝি বলেন, গত ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে সাগরে মাছ ধরতে রওনা দেন তারা। ২৩ আগস্ট সকালে কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে জাল ফেলেন তারা। ওই দিন বিকালেই জাল তোলার সময় জালে প্রচুর ইলিশ মাছ দেখতে পান। পরে তারা জাল তুলে ট্রলারভর্তি মাছ নিয়ে মহিপুর মৎস্য বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। ২৬ আগস্ট দুপুরে মাছ নিয়ে মহিপুর মৎস্য বন্দরে পৌঁছান এবং রাতে প্রত্যাশিত মূল্যে ওই মাছ বিক্রি করেন।

জেলে আবুল খায়ের বলেন, তিনি মাছের ব্যবসা করতে গিয়ে ধার-দেনায় জর্জরিত প্রায়। চলতি মৌসুমে স্ত্রীর স্বর্ণালংকার বন্ধক ও ধারদেনা করে ৮ লাখ টাকার পুঁজি দিয়ে জ্বালানি, খাবার এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রী নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে রওয়া দেন। একবার জাল ফেলার পর তুলতে গিয়ে দেখেন জালে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। মাছ নিয়ে মৎস্য বন্দর মহিপুরে মিঠুন মৎস্য আড়তে এসে ওজন দিয়ে দেখেন ১৭০ মণ হয়েছে; যা তিনি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

মিঠুন ফিশের মালিক মিঠুন দাস বলেন, জেলে আবুল খায়েরের জালে বিভিন্ন সাইজের মাছ ধরা পড়েছে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামের এলসি সাইজের মাছ রয়েছে ৫৭ মণ। ৪২ হাজার টাকা মণ দরে এর দাম হয়েছে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ৫০০ গ্রাম ওজনের মাছ ধরা পড়েছে ৬৮ মণ। ৩৩ হাজার টাকা মণ দরে দাম হয়েছে ২২ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। তিনটিতে এক কেজি হয় এমন সাইজের ইলিশ ধরা পড়েছে ৯ মণ। ২৭ হাজার টাকা মণ দরে দাম হয়েছে ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ধরা পড়েছে এক মণ। এর দাম হয়েছে ৪৮ হাজার টাকা। তবে ট্রলারে সঠিকভাবে মাছ সুরক্ষা করতে না পারায় ৫০০ গ্রাম থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ৩৫ মণ মাছ নষ্ট হয়েছে; যার আনুমানিক মূল্য ৫ লাখের অধিক।

আরো পড়ুন