কুমিল্লায় গুলিবিদ্ধ আইনজীবী কালামকে বাঁচানো গেল না
গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন (৫ আগস্ট) গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত বিএনপিপন্থী আইনজীবী আবুল কালাম আজাদকে বাঁচানো গেল না। টানা ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন। অ্যাডভোকেট আবুল কালাম জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কুমিল্লা শাখার যুগ্ম সম্পাদক এবং কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। তার বাসা নগরীর রানীর দিঘীর দক্ষিণ পাড় এবং গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে।
দলীয় সূত্র ও সহকর্মীরা জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিকেলে নগরীর প্রতিটি সড়কে বিজয় মিছিলের পাশাপাশি সহিংসতা চলে। বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে কুমিল্লার আদালতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু, তার ছেলে শাফিউল হক আলভী, আরফানুল হক অবরিন ও অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী। মাগরিবের নামাজের সময় নগরীর মোগলটুলী এলাকায় পৌঁছালে তাদের ওপর হামলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, কুমিল্লা সিটি করপোরশেনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ রায়হান আহমেদ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং ককটেল ছুড়েন। এতে অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ কোমরে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় অ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু এবং তার দুই ছেলের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। আহত হন আরও ৬/৭ জন আইনজীবী। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে শংকটাপন্ন অবস্থায় ওই রাতেই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আবুল কালামকে রাজধানীর একটি হাসপাতালের আইসিইউ এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসকরা অ্যাডভোকেট আজাদকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আইনজীবী কাইমুল হক রিংকু সমকালকে বলেন, আদালতে সহিংসতা থামিয়ে ফেরার পথে বিনা উসকানিতে কাউন্সিলর রায়হানের নেতৃত্বে কালা বাচ্চু, রাকিব, সুমন ও রকিসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর গুলি বর্ষণ এবং ককটেল ছুড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেলেন আমাদের সহকর্মী কালাম। এ সময় আমরা অনেকেই আহত হই।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টায় আদালত প্রাঙ্গণে প্রয়াত আবুল কালাম আজাদের নামাজে জানাজার পর দাফনের জন্য মরদেহ গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে নেওয়া হবে।
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ হোসেন বলেন, ঢাকায় নিহতের ময়নাতদন্তের পর মরদেহ কুমিল্লায় আনা হবে। আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় বুধবার রাতে তার সহকর্মী জসিম বাদী হয়ে কাউন্সিলর রায়হানসহ ৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০-২৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। তবে তিনি (কালাম) মারা যাওয়ায় মামলাটি এখন হত্যা মামলা হিসেবে তদন্ত হবে। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।