কুমিল্লায় লেভেল ক্রসিং যেন মৃত্যুকূপ
ডেস্ক রিপোর্টঃ ছুটে আসছে ট্রেন। লেভেলক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান, নেই যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক। ট্রেনের ধাক্কায় ধুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে যানবাহন, খন্ডবিখন্ড হয়ে ছিটকে পড়ছে পথচারির দেহ। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের আওতাধীন অরিক্ষত লেভেলক্রসিংয়ে এভাবেই প্রায়ই ঝরছে তাজা প্রাণ। এটি দেখার যেন কেউ নেই।
কুমিল্লা লাকসাম রেলওয়ে জংশনের আওতাধীন ১১৭টি লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৪টি অবৈধ। আর এসব অস্বীকৃত লেভেলক্রসিং লেভেলক্রসিংয়ের সামনে ‘পথচারি বা যানবাহন চালকের নিজ দায়িত্বে পারাপারের’ সর্তকবাণীর সাইনবোর্ড টানিয়ে রেলওয়ে কর্তপক্ষ দায়-দায়িত্ব থেকে মুক্তি নিয়েছেন। কিন্তু বছরের পর বছর টানানো সতর্কবাণী ঝুললেও বিষয়টি সমাধানে সরকারি কোন উদ্যোগ নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে রেলওয়ের কুমিল্লার লাকসাম জংশনের আওতাধীন লাকসাম পৌর কার্যালয়ের উত্তর ও দক্ষিণাংশ, দৌলতগঞ্জ, ফতেহপুর, বাটিয়াভিটা, কালিয়াচৌ, চন্দনাবাজার, বিষ্ণুপুর, রাজাপুর, খিলা, বাতাবাড়িয়া, সাতেশ্বর, লুদুয়া, টুগুরিয়া, হাতিমারা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাশার পেয়ারাপুর, চিতৈষী বাজার, গন্ডামারা, কুচাইতলি, সাতবাড়িয়া, হরিশ্বর, আজগরা বাজার, বাইনচাটিয়া, ভৈষকপালিয়া, ফয়েজগঞ্জ, পেরুল, দুর্লবপুর, কাকসার, শ্রীরামপুর, মাতাইলপুর, আলীশ্বর, জয়নগর, বরল, সৈয়দপুর, বাগমারা, বিজয়পুর জেলখানা বাড়ি, দত্তপুর, শ্রীমন্তপুর, শ্রীনিবাস, জাঙ্গালিয়া, নোয়াগাঁও, গোমতী নদীর উত্তরপাড়, রসুলপুর, গাজীপুর, রাজাপুর, হরিমঙ্গলবাজার, শশীদল, বজরা, চৌমুহনী, মাইজদী ও সোনাপুর এলাকাসহ প্রায় ৮৪টি অনুমোদনবিহীন লেভেলক্রসিং রয়েছে। এসব লেভেলক্রসিং পারাপার হতে গিয়ে ট্রেন ও যানবাহন সংঘর্ষে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে বহু মানুষকে। প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ে যেমন মুত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তেমনি বৈধ লেভেলক্রসিংয়ের অনেক জায়গায় লোক নিয়োগ না থাকায় সেখান দিয়েও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে হচ্ছে।
রেলওয়ের হিসেবে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংগুলো অস্বীকৃত বা অবৈধ। যা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ ও অনুমতি ছাড়াই যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করেছে। আর তাই এসব লেভেলক্রসিংয়ে লোকবল এবং ব্যারিয়ার নির্মাণের কোন এখতিয়ার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নেই। ফলে প্রতিবছর অস্বীকৃত ও অরক্ষিত ৮৪ লেভেলক্রসিংয়ের মৃত্যুকুপে ঝরছে অন্তত শতাধিক তাজাপ্রাণ। লেভেলক্রসিংকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ স্বীকৃত ও অস্বীকৃত বা অবৈধ হিসেবে দুই শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ রেলওয়ে কর্তপক্ষকে অবহিত না করে রেললাইনের ওপর দিয়ে যেসব সড়ক তৈরি করেছে এগুলো অবৈধ লেভেলক্রসিং হিসেবে চিহ্নিত। এধরণের লেভেলক্রসিংয়ে রেলওয়ের নিযুক্ত গেটম্যান, যানবাহন থামানোর প্রতিবন্ধক বা ব্যারিয়ার দেয়ার সুযোগ নেই। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওইসব লেভেল ক্রসিংয়ের সামনে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নিজেদের দায় সেরেছেন। এসব সাইনবোর্ডের কোনটিতে লেখা রয়েছে-সাবধান! কোনটিতে যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কোনটিতে পথচারি ও সকল যানবাহন নিজ দায়িত্বে পারাপার হওয়ার সতর্কবাণী দেয়া আছে।
পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘রেলওয়ের অনুমতি ছাড়া এলজিইডি, সওজ, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ জনস্বার্থের কথা বলে নিয়মনীতি না মেনে রেললাইনের ওপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে যাচ্ছে। কিন্তু এরকম রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম রয়েছে বিষয়টি রেলওয়ের যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করে অনুমতি নেয়া এবং গেট, অবকাঠামো নির্মানের খরচ ও গেটম্যানের আট বছরের বেতনভাতার অর্থ অগ্রিম প্রদান করতে হয়।’ কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লেভেলক্রসিং নির্মাণে এসব নিয়ম মানা হয়না বলেই লেভেলক্রসিংগুলো অবৈধ বা অস্বীকৃত ঘোষণা করে থাকে রেলওয়ে। বিশেষ করে রেলওয়ে ও সরকারের ওইসব বিভাগের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই লেভেলক্রসিংগুলো বৈধতার স্বীকৃতি পাচ্ছেনা। আর তাই সাইবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে সব দায় থেকে মুক্ত থাকছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সূত্রঃ ইনকিলাব