কুমিল্লায় দুই প্রার্থীর বৈধতায় বিপাকে বিএনপি!
ডেস্ক রিপোর্টঃ নির্বাচন কমিশনে আপিলের মাধ্যমে মনোনয়নের বৈধতা ফিরে পেয়েছেন কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী অধ্যক্ষ মো. ইউনুস এবং কুমিল্লা-৩ আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী কে এম মজিবুল হক। এ দুই নেতার প্রার্থিতা বৈধতায় সমর্থক-কর্মীদের মাঝে আনন্দ বয়ে গেলেও একক প্রার্থী বাছাই নিয়ে কিছুটা জটিলতা বেড়েছে দলে, বিপাকে পড়েছেন নীতিনির্ধারকরা। সেই সাথে শঙ্কা জেগেছে এ দুটি আসনে বিএনপির অন্য দুই প্রার্থীর শিবিরে।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে চারবারের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ ইউনুসের সাথে মনোনয়নের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ। অপরদিকে কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে মজিবুল হকের সাথে মাঠে আছেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী সাহিদা রফিক।
এমনিতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ১১টির আসনের মধ্যে ১০টিতেই (কুমিল্লা-৭ চান্দিনা আসন ছাড়া) একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। সব মিলিয়ে দলটি থেকে জেলায় প্রার্থী আছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে তিনজন আছেন দুটি করে আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায়। যদিও নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থীর ঠিক করার সিদ্ধান্ত আজ-কালের মধ্যে জানানোর কথা রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর সময় কুমিল্লা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে প্রার্থিতার বৈধতা হারান কুমিল্লা-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও চারবারের সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মো. ইউনুস এবং কুমিল্লা-৩ আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী কে এম মুজিবুল হক।
বাছাইয়ে অধ্যক্ষ মো. ইউনুসের সব কাগজপত্র সঠিক থাকলেও নোটারি যে আইনজীবী করেছেন, তার নোটারি রেজিস্ট্রেশন মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ইউনুসের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। অপর দিকে আয়কর সনদ জমা না দেয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হয় কে এম মজিবুল হকের মনোনয়নপত্রটি। যদিও মজিবুল সে সময় দাবি করেছিলেন, তিনি মনোনয়নপত্রের সাথে আয়কর সনদ জমা দিয়েছেন এবং এর ভিডিও ফুটেজ ও ছবি তুলে রেখেছেন। তখন তাকে ইসিতে আপিলের পরামর্শ দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর।
অবশেষে ইসিতে আপিল করে বৃহস্পতিবার মনোনয়নের বৈধা ফিরে পান মো. ইউনুস ও মজিবুল হক। আপিল আবেদনের শুনানির প্রথম দিন বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী এজলাসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বে এ শুনানি হয়।
এদিকে এ দুই প্রার্থীসহ জেলার ১০টি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে কিছুটা বিপাকে রয়েছেন। সব আসনেই বাছাইয়ে বৈধতা পেয়েছেন দলটির একাধিক প্রার্থী। শুধুমাত্র চান্দিনা- আসনেই কোনো প্রার্থী দেয়নি বিএনপি। সে আসনে ২০ দলীয় জোটের মনোয়ন পেয়েছেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ।
কুমিল্লার ১০টি আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়টিকে জটিলতা বলতে নারাজ দলের দক্ষিণ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া। দলে কোন্দল-বিভেদ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত দল যাকে সিদ্ধান্ত দেবে, সবাই তার পক্ষেই কাজ করবে। ঐক্যবদ্ধ বিএনপি আগামী নির্বাচনে জেলার সব কটি আসনই পুনরুদ্ধার করবে।
জেলা রির্টার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-হোমনা) ও কুমিল্লা-২ (মেঘনা-তিতাস) আসনে বিএনপির প্রার্থী আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন ও তার পুত্র দলের কেন্দ্রীয় সদস্য ড. খোন্দকার মারুফ আহমেদ। কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনে দলটির প্রার্থী উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান। কুমিল্লা-৬ (সদর-মহানগর) আসনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি কারাবন্দী মনিরুল হক চৌধুরী এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াসিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া প্রার্থী হয়েছেন। কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে দলটির প্রার্থী সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমন ও কেন্দ্রীয় যুবদলের ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু। কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনে প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি আনোয়ারুল আজিম ও লাকসাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মফিজুর রহমান। কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ-নাঙ্গলকোট-লালমাই) আসনে প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি কারাবন্দি মনিরুল হক চৌধুরী, নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোবাশ্বের আলম ভূইয়া ও বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য মীর আবু জাফর শামসুদ্দীন দিদার।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী নাছিমুল হক।
সূত্রঃ পরিবর্তন