তিন চাকার যানের দখলে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক
ডেস্ক রিপোর্টঃ মহাসড়কে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজিবাইকসহ তিন চাকার সব যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কুমিল্লার মুরাদনগর, দেবীদ্বার ও মিরপুর পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশের সামনেই অবাধে চলাচল করছে এসব অবৈধ যানবাহন। যানবাহনগুলো সাধারণ গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া মহাসড়কে যত্রতত্রভাবে চলাচল করায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীদের কাছ থেকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে এসব যানবাহনের চালকরা। এ ছাড়া ইজিবাইক ও অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ। এসব নিয়ে জনমনে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বিভাগের সঙ্গে সিলেট বিভাগে যাতায়াতের একমাত্র পথ কুমিল্লা-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট মহাসড়ক। অত্যন্ত ব্যস্ত এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর এসব যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে নিষিদ্ধ হাজারো অটোরিকশা-ইজিবাইক। ফলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছরে এই মহাসড়কে এসব অটোরিকশা অর্ধশতাধিক যাত্রীর প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক নূরুল হক বলেন, ‘মহাসড়কে যদি বিভিন্ন গতির যানবাহন একসঙ্গে চলে এবং সেগুলোর মধ্যে যদি গতির পার্থক্য বেশি হয় তাহলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে হাইকোর্ট থেকে মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম-কুমিল্লা-কোম্পানীগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে মুরাদনগর উপজেলার প্রায় চার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা অবাধে চলাচল করছে। অন্যদিকে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়াও আদায় করছে তারা। বিশেষ করে দিনের বেলায় প্রতিটি স্টেশনে গাড়ি সিরিয়াল মেনটেন করে চললেও সন্ধ্যার পরে তারা যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ ভাড়া নিচ্ছে। তাদের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে অনেকটা বাধ্য হয়েই যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করছে।
অন্যদিকে অটোরিকশা-ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার জন্য মহাসড়কের পাশে গ্যারেজ করেছে অনেকে। গ্যারেজগুলোতে পল্লী বিদ্যুতের আবাসিকের মিটার লাগানো রয়েছে। অনেক গ্যারেজ মালিক বাণিজ্যিক মিটার নামিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ করছেন। একেকটা গ্যারেজে প্রতি রাতে ২০-৩০টি অটোরিকশার ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, মুরাদনগর উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্যারেজ রয়েছে। এসব গ্যারেজে ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এতে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আবাসিক এলাকায় লোডশেডিং বাড়ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ মুরাদনগর উপজেলার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার হাবিবুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরপুর হাইওয়ে থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অগোচরে নিষিদ্ধ তিন চাকার যান মহাসড়কে চলছে। ধরতে পারলে আমরা মামলা দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ ড্রাইভাররা বলছে, আপনাকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে গাড়ি চালাচ্ছে তারা? এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘মহাসড়কে চলাচলরত অবৈধ সিএনজি, অটোরিকশা ও ইজিবাইকের ব্যাপারে প্রতিদিনই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। মাঝেমধ্যে ব্যাটারি খুলে নিয়ে আসা হচ্ছে। এর পরও তারা থামছে না। মহাসড়ক থেকে এসব তিন চাকার যান সরাতে আমরা সব রকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তা ছাড়া অবৈধ অটোরিকশার গ্যারেজ মালিকদের সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশের কোনো আঁতাত নেই।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, ‘যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা শিগগিরই এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ