কুমিল্লায় কনের পরিবারের তাড়া খেয়ে বিয়ের পিড়ি থেকে পালাল সিঙ্গাপুর প্রবাসী
কুমিল্লা দেবীদ্বার উপজেলার বিহারমন্ডল গ্রামের এক সিঙ্গাপুর প্রবাসী বিয়ে করতে গেলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কণে পক্ষ বর পক্ষের লোকদের ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটে গত বৃহস্পতিবার। বিহারমন্ডল গ্রামের তাজেল মিয়ার পুত্র সিঙ্গাপুর প্রবাসী রাহিক কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় বিয়ে করতে গেলে ওই ঘটনা ঘটে।
উপজেলার বিহারমন্ডল গ্রামের আবু ইউছুফ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গত ৮মার্চ বিহারমন্ডল গ্রামের তাজেল মিয়ার পুত্র রাহিক সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসার পর স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় চলাফেরা করেন। গত ১৯মার্চ কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায় বিয়ে করতে গেলে ওই এলাকার প্রবাসীরা ফোনে জানায় রাহিক অসুস্থ্য এ সংবাদে কনের পরিবার বর পক্ষকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। পরে নিজ গ্রামে এসেও লোক লজ্জায় বর্তমানে পলাতক রয়েছে বলে তিনি জানান। ওই বিষয়ে মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম জানান, তাকে খুঁজে বের করতে স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির জানান, বিষয়টা শোনেছি আমি নিজেই ওই এলাকায় অস্থান করে খোঁজ খবর নিচ্ছি।
দেবীদ্বারে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের কোন ভাবেই হোম কোয়ারেন্টাইনে আটকে রাখা যাচ্ছেনা। পলাতকদের খুঁজে বের করতে হন্যে হয়ে ঘুরছে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সচেতন ব্যক্তিরা। এদিকে শনিবার সকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে খাবার হোটেল, রেস্তোরা, চা’ষ্টল সহ জনসমাগম হবে এমন ভোগ্যপণ্যের দোকান বন্ধের নির্দেশনা বিষয়ক এক প্রজ্ঞাপন প্রাপ্তির পর স্থানীয় প্রশাসন মাঠে নামেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যানুযায়ী গত এক মাসেই অন্তত: শতাধিক প্রবাসী দেশে ফিরে আসলেও তাদের সকলের তথ্য তাদের কাছে নেই। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছ থেকেও তেমন সাড়া পাচ্ছেননা। বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রবাসীদের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত ১০জন হলেও আজ প্রাপ্ত আরো ১২জনকে নিয়ে মোট ২২ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত (১৪দিন) সময় অতিবাহিত না করে নিয়ম বহির্ভূত বাহিরে ঘুরা ঘুরি করতে দেখা গেলেই জেল জরিমানার নির্দেশ দিলেও এ পর্যন্ত কারোরই জেল জরিমানা হয়নি।
এ ব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আহমেদ কবির জানান, গত ১৫ তারিখ থেকে এ পর্যন্ত ২২ প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছি। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত একজনের রিপোর্ট ন্যাগেটিভ আসায় সে মুক্ত হয়েছে। লোকমুখে শোনতে পাচ্ছি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা প্রবাসীদের কেউ কেউ হাট-বাজার সহ দিব্বী ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ নিখোঁজও হয়ে যাচ্ছে। বিদেশ ফেরত অনেকেই নিজেদের আগমনের তথ্য গোপন রাখার চেষ্টা করছে। ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারদের কাছ থেকেও তেমন সাড়া পাচ্ছিনা।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিদা আক্তার’র নেতৃত্বে এবং দেবীদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এস,আই) আবদুল বাতেন’র নেতৃত্বে একদল পুলিশ নিয়ে হ্যান্ড মাইকে যোগে খাবার হোটেল, রেস্তোরা, চা’ষ্টল বন্ধ সহ বিভিন্ন ভোগ্যপন্যের দোকানে খাদ্য সামগ্রী বিক্রয়ের নির্দেশনাবলী প্রচার করেন। এরই মধ্যে হঠাৎ অনেক খাবার দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দোকানপাঠনে ব্যবসায়ি ও অফিসগামী কর্মচারীদের দুপুরের খাবার সমস্যায় পড়ে বিব্রত হতে দেখা যায়।
এ ব্যপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহিদা আক্তার বলেন, নির্দেশনা প্রাপ্তির পর উপজেলা সদরই নয় বিভিন্ন বাস ষ্ট্যাশন, হাট-বাজারে অভিযান চালান। বিশেষ করে দেবীদ্বার সদর, বারেরা, ভিড়াল্লা, চরবাকর বাস ষ্ট্যাশন, জাফরগঞ্জ, এলাহাবাদ ও মোহনপুর বাজারে অভিযান পরিচালনা শেষে পুন:রায় দেবীদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচলনার সময় কয়লা রেস্তোরা, কালাম হোটেল ও আয়োজন হোটেলের মালিক’কে আটক করে পরে তাদের সতর্ক করে ছেড়ে দেন।
ব্যাসায়ি আবুল হোসেন ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন, আমরা অতিতের ধারাবাহিক নিয়মে দুপুরের খাবার খেতে হোটেলে আসি, কিন্তু অভিযানের কারনে খাবার খেতে পারি নাই। তবে হোটেল মালিকরা বলেন পার্সেল হলে খাবার দেয়া যাবে। পূর্ব ঘোষণা থাকলে আমরা টিফিন ক্যারিয়ারে বাসা থেকেই খাবার নিয়ে আসতে পারতাম।
একই সূরে কথা বললেন কালাম হোটেল’র মালিক আবুল কালাম, তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস রোধে আমাদের সবার এক যোগে কাজ করতে হবে এবং আমরা করব। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে হোটেল বন্ধ করায় আমরা বিপাকে পড়ে যাই। প্রতিদিনের হিসেবে ভোক্তাদের খাবার রান্না করে ফেলেছি। এখন খাবারগুলোও নষ্ট হবে। পূর্ব ঘোষণা থাকলে খাবার রান্নায় সতর্ক থাকতে পারতাম।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান জানান, করোনা সংক্রামন থেকে জনগনকে মুক্ত রাখতেই হোটেল রেস্তোরায় বসে খাবার খাওয়ার উপর জনস্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ি, অফিস কর্মচারী, পরিবহন যাত্রী ও চালক কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত খাবার হোটেলে বা মিষ্টির দোকানে বসে কেউ খেতে পারবেনা। তবে পার্সেল নিতে পারবে যা নিরাপদ জায়গায় খেতে পারবে।