কুমিল্লা চিড়িয়াখানার যুবরাজ ভালো নেই
মহিউদ্দিন মোল্লাঃ কুমিল্লা চিড়িয়াখানার যুবরাজ (সিংহ) ভালো নেই। অনেকদিন ধরে শয্যাশায়ী।
খাবারও তেমন মুখে তুলছে না। যুবরাজকে দেখতে গিয়ে দর্শনার্থীদেরই উল্টো মন খারাপ হয়ে যায়। ইতিমধ্যে তার মুমূর্ষু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। এরপর থেকেই চিড়িয়াখানার ঠিকাদার ও জেলা পরিষদকে তুলাধুনো করছেন কেউ কেউ।
সালমান নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী যুবরাজের ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘যারা যুবরাজের খবার খেয়ে ফেলেছে তাদের বিচার চাই। তাদেরও এভাবে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হোক। ’
কামাল হোসেন নামের আরেকজন লিখেছেন,‘ঠিকাদার জেলা পরিষদকে খাওয়ালে বিল পাবে, সিংহকে খাওয়ালে বিল পাবে না। ’
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা চিড়িয়াখানা-নামেই চিড়িয়াখানা। নেই উল্লেখযোগ্য পশু-পাখি।
যে কয়েকটি পশু-পাখি আছে তাও মুমূর্ষু প্রায়। অধিকাংশ খাঁচা শূন্য পড়ে আছে। কয়েকটি খাঁচা ভেঙে আছে। একটু বৃষ্টি হলে চিড়িয়াখানা ডুবে যায়, ডুবে যায় এর প্রবেশ পথও। এতে দিন দিন দর্শনার্থী কমছে। গত ৫ বছর ধরে এমন দুরাবস্থা কুমিল্লা চিড়িয়াখানার।
সূত্র মতে, ১৯৮৬ সালে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর পাশে ১০.১৫ একর ভূমিতে গড়ে উঠে কুমিল্লা চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এই ভূমির মালিক জেলা প্রশাসন। আর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা পরিষদ। এই দো-টানায় চিড়িয়াখানার কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা চিড়িয়াখানায় তেমন দর্শনার্থী নেই, অনেকটা পরিত্যক্ত বাড়ির মতো। খাঁচাগুলো শূন্য পড়ে আছে। সব মিলিয়ে ৮টি বানর, ৩টি বন মোরগ, ৩টি হরিণ রয়েছে। একটি মাত্র সিংহ ‘যুবরাজ’ মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। যে কোনো সময় সিংহটি মারা যেতে পারে।
সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি আলী আকবর মাসুম বলেন, কুমিল্লার মতো বড় শহরের চিড়িয়াখানার এই বেহাল অবস্থা দুঃখজনক। চিড়িয়াখানার সংস্কার ও পশু-পাখি দিয়ে নতুন করে সাজানো সময়ের দাবি।
লিজ নেয়া অংশীদারদের একজন রায়হান হাসানাত বলেন, ”লিজ ও পশু-পাখির খাবার মিলিয়ে বছরে ১৯ লাখ টাকা খরচ। কিন্তু পশু-পাখি না থাকায় দর্শনার্থী তেমন আসছে না। এতে আমাদের লোকসান গুণতে হবে। ”
কুমিল্লা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, যুবরাজ সিংহটি মুমূর্ষু অবস্থার রয়েছে। চিকিৎসক এনে তার চিকিৎসা করিয়েছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, একটি সিংহ সাধারণত ১৪ বছর বাঁচে। যুবরাজের বর্তমান বয়স ১৮ বছর। এটি মূলত তার বাড়তি জীবনকাল অতিবাহিত করছে। তিনি আরও বলেন, চিড়িয়াখানার মাটি ভরাট করেছি, দেওয়াল নির্মাণ চলছে। কিছু দিনের মধ্যে কিছু পশু-পাখি আনা হবে। আশা করছি চিড়িয়াখানার উন্নয়নে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবো।
সূত্রঃ বাংলাদেশ প্রতিদিন