সরকারিকরণের পর সবার প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে
১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয়করণ হয় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজ। এরপর কলেজটিকে ঘিরে সবার প্রত্যাশা বেড়ে যায় অনেক। কর্তৃপক্ষ নতুন উদ্দমে কলেজটির সাফল্য ধরে রাখতে বদ্দপরিকর। তাদের আস্থার জায়গাটা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই কলেজটিকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। নানা ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে শিক্ষকদের। ক্যাম্পাসটিকে সাজানো সবুজের বাগানে রূপান্তর করতে নেয়া হয়েছে বেশ কিছু কর্মসূচী। অনেক সাফল্যের মাঝেও কারও কারও প্রশ্ন শিক্ষার গুণগত মান বাড়বে তো? তবে সব চ্যালেঞ্জ ছাপিয়ে কুমিল্লার শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সংকল্পবদ্ধ কলেজটির অভিভাবক অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক।
কলেজের অধ্যক্ষ পদে ড. এ কে এম এমদাদুল হকের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৬সালের ৩১ অক্টোবর বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার কর্মকর্তা ড. এমদাদ ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেছিলেন। যোগদানের মাত্র তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ড. এমদাদকে ২০১৭ সালের জন্য কুমিল্লা জেলার শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচন করেন। তার সুনিপুন নেতৃত্বে সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজ। কলেজের সাফল্য ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা হয় অধ্যক্ষ ড. এ.কে.এম এমদাদুল হকের সাথে।
ডেইলি কুমিল্লানিউজ: আপনার আগেও আরও দু’জন অধ্যক্ষ এ কলেজের দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত সুনামের সাথে। তাছাড়া যোগদানের পর সহকর্মীদের কাছ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন?
অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক: শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজে যোগদানের পর আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সবার সহযোগিতায় আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতার সাথে পালন করতে। আমি যোগদান করার পর দেখেছি, কলেজটি স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত হতে হবে এরকম শর্ত থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মাথায় সবসময় টেনশন থাকত। অভিভাবকদের উপরও আর্থিক চাপ বেড়ে গিয়েছিল। আমরা একটি মানসম্মত প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে ও কুমিল্লাবাসির প্রত্যাশার কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি উপলব্দি করে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজেটিকে সরাসরি সরকারিকরণ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। এ জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞ। আমরা কৃতজ্ঞ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি। কৃতজ্ঞ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের প্রতিও।মানসম্মত একটি প্রতিষ্ঠান তৈরিতে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অবদান কুমিল্লাবাসি কখনো ভুলবে না। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুছ সালাম ও সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রুহুল আমিন স্যারের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁরা সংকটকালীন সময়ে এ কলেজের হাল ধরেছিলেন এবং অত্যন্ত আন্তরিকতা ও দক্ষতার সাথে কলেজ পরিচালনা করেছিলেন।
ডেইলি কুমিল্লানিউজ: ডাটাবেজ সংগ্রহ ও অনলাইন ম্যানজম্যান্টে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?
অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক: সরকারিকরণের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কলেজ পরিচালনার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সে নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজ। মাসেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিঙ্গার ডিভাইজ ভিত্তিক বায়োমেট্রিক হাজিরা ও অনলাইন কলেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করেছি। বিজয় ডিজিটাল ও নেটিজেন আইটি লিমিটেড এবং গ্রামীন ফোনের সহায়তায় অনলাইন ম্যানেজমেন্ট এর সুফল পাচ্ছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক- কর্মচারী ও অভিভাবকবৃন্দ। ফিঙ্গার ডিভাইজ ভিত্তিক বায়োমেট্রিক হাজিরা পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারীর উপস্থিতি নিশ্চিত করা সহজিকীকরণ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক,কর্মচারীর কলেজে আগমন ও প্রস্তানের সময় রেকর্ডভুক্ত থাকছে। অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর তথ্যসম্বলিত মেসেজ প্রতিদিন অটো সংশ্লিষ্ট অভিভাবকের মোবাইলে চলে যাচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীর দৈনিক, মাসিক, বাৎসরিক উপস্থিতি, অনুপস্থিতির তথ্য অভিভাবক ঘরে বসে অনলাইনে দেখতে পারছেন।
ডেইলি কুমিল্লানিউজ: প্রশ্নের গোপনীয়তা কতুটুকু রক্ষা করা হয়?
অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক: কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজে প্রশ্ন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ কলেজের সকল শিক্ষক নিজ নিজ ই-মেইলের মাধ্যমে পরীক্ষার প্রশ্ন কলেজের ই-মেইলে পাঠান। ই-মেইলে প্রাপ্ত প্রশ্ন ও প্রশ্ন ব্যাংকে রক্ষিত প্রশ্ন থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র মডারেশন করা হয়। পরীক্ষার দিন সকালে কলেজের ফটোকপি মেশিনে কঠোর গোপনীয়তার সাথে প্রশ্ন ফটোকপি করে পরীক্ষার হলে সরবরাহ করা হয়। এখন পরীক্ষা কমিটি পরীক্ষা গ্রহণে কোন সমস্যায় পড়ছেন না।
ডেইলি কুমিল্লানিউজ: প্রযুক্তির এ যুগে আপনারা কতটুকু এগিয়ে?
অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক: কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজে একটি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে সকল পরীক্ষার ফলাফল প্রস্তুত করা শুরু করেছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক স্ব-স্ব প্যানেলে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ইনপুট দিচ্ছেন। সকল বিষয়ের নম্বর ইনপুট হয়ে গেলে সুনির্দিষ্ট প্রোগ্রাম অনুযায়ী অটো ফলাফল প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থী বা অভিভাবক বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে অনলাইনে ফলাফল দেখতে পারছেন। অনলাইনে মার্কসিট, প্রবেশ পত্র প্রভৃতি প্রিন্ট করে নিতে পারছেন। শুধু তাই নয় অভিভাবক তার সন্তানের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল একসাথে একটি পেইজে দেখতে পারছেন। আগে পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রস্তুত করতে শিক্ষকদের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যেত এবং ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর অনেক ভুল ভ্রান্তি দেখা যেত। এতে শ্রম ও সময় দুটোরই অপচয় হতো যা পাঠদানকে ক্ষতিগ্রস্থ করতো মারাত্বকভাবে।
ডেইলি কুমিল্লানিউজ: মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন হয়েছে কতটুকু, শিক্ষকরা কি ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরী করতে পারছেন?
অধ্যক্ষ ড. এ কে এম এমদাদুল হক: কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড মডেল কলেজে ওয়েল ডেকোরেট পর্যাপ্ত মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম সচল ও কার্যকর রয়েছে। শিক্ষকদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। এ জন্য শিক্ষকদেও ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি বিষয়ক ইনহাউজ শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস গ্রহণের সচিত্র প্রতিবেদন ড্যাসবোর্ডে দাখিল করা হচ্ছে। ডাইনামিক ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আইসিটি ল্যাবে প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেম সংযোজন করা হয়েছে। শিক্ষক মলিনায়তন ও আইসিটি ল্যাবে ফ্রি ওয়াইফাই সংযোগ দেয়া হয়েছে। সকল শিক্ষককে বাতায়ন সদস্য করা হয়েছে। সকল শ্রেণি কক্ষে সিসি ক্যামরা স্থাপন করা হয়েছে। মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
এ সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে আমাদেরকে শুধু যে পরিশ্রমই করতে হয়েছে তা নয়; অনেক অর্থও ব্যয় করতে হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষকদের কারণিক কাজ থেকে মুক্তি দেয়া, যাতে তারা একাডেমিক কাজে অধিক সময় ও মেধা ব্যয় করতে পারেন। আশা করি সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। সরকারিকরণের পর শিক্ষকদের দায়িত্ব আরো বেড়ে গেছে বলে আমি মনে করি। শিক্ষক কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগিতায় কলেজটি সরকারিকরণের পর কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল কলেজ পরিবার নতুন উদ্যোমে এগিয়ে যাবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। কুমিল্লাবাসী উপকৃত হবেন। এ আমার প্রত্যাশা।