ছোট্ট দোকানটিই ভরসা ৭০ বছরের বৃদ্ধা ব্রাহ্মণপাড়ার রতন বেগমের
ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলার সংযোগ সড়ক সাইচাপাড়া-জাফরগঞ্জ। মালাপাড়া ইউনিয়নের রামনগর হয়ে রাস্তাটি গোমতীর পাড়ে গিয়ে মিশেছে। দুই পাশে ধানক্ষেত।
রামনগরের এই রাস্তায় একটি আমগাছের নিচে বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে খুপড়ি খুলে বসেছেন রতন বেগম (৭০)। তাতে আছে বাচ্চাদের চিপস, চানাচুর, আচার আর চকলেট।
বৃদ্ধা রতন বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা যুদ্ধের পাঁচ বছর আগে তার বিয়ে হয়। পরে পারিবারিক কলহে স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে আসেন।
তার কোনো সন্তান নেই। এখন ভাইদের সংসার বড় হয়ে গেছে। তাই ঠাঁই হচ্ছে না সেখানে। শেষ বয়সেও জীবন যুদ্ধে নিজেকে নেমে পড়তে হয়েছে।
রতন বেগম জানান, প্রথম দিকে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। এখন বয়স ৭০। গায়ের জোর কমে এসেছে। বাতের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে রতন বেগমের একমাত্র ভরসা এখন এই খুপরির দোকান। সেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় এক থেকে দেড়শ টাকা। আর তাতেই জীবন চলছে রতন বেগমের।
এভাবে আর কতদিন? জানতে চাইলে রতন বেগম চোখের পানি মুছে বলেন, ‘জানি না। একটা মানুষের নিত্যদিনের খরচ কি-না লাগে? এখন রোগ বেড়েছে। ব্যবসার পুঁজি থেকে খরচ করে ওষুধ কিনে খেতে হচ্ছে।’
বৃষ্টি আসলেই রতন বেগমের খুপরি ওলট-পালট হয়ে যায়। তাই আকাশে মেঘ জমলেই দোকানের পণ্য নিয়ে আগে আগে ঘরে ফিরে যান। ঘুমানোর ঘরটাও কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছে। এক আত্মীয় কয়েকদিন আগে কিছুটা মেরামত করে দিয়েছেন। রতন বেগমের পুঁজি ৪-৫ হাজার টাকা। তিনি কারো কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে চান না।
মালাপাড়া গ্রামের সাবেক মেম্বার আবদুর রশিদ বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে রতন বেগম এইভাবে দোকান খুলে জীবিকা নির্বাহ করছেন। অভাব আর কষ্টের সঙ্গে তার যুদ্ধ।’
জানতে চাইলে মালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান এ কে এম আজাদ ভূঁইয়া বলেন, ‘রতন বেগমের জন্য নতুন দোকান তুলে দেয়া হবে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে একটি ঘর তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’