কুমিল্লা মিডল্যান্ড হসপিটালের সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটে অবস্থিত মিডল্যান্ড হসপিটাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের কয়েকজন শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকার লাইফ কেয়ার হসপিটালে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. এ বি এম খোরশেদ আলম নামে একজন চিকিৎসক ও ওই হাসপাতালের শেয়ারহোল্ডার এই অভিযোগ করেন।
ডা.খোরশেদ নিজেকে মিডল্যান্ড হসপিটালের পরিচালক (অর্থ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) বলে দাবি করেছেন। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ডা. খোরশেদ বলেন, ১৯৯৩ সালে ১৭ শতক সম্পত্তির ওপর মিডল্যান্ড হসপিটালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পাঁচতলা বিশিষ্ট হাসপাতালটির ৪০টি শেয়ারের মালিক ২৩ জন। কিন্তু হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজন শেয়ারহোল্ডার ও শেয়ারহোল্ডার প্রতিনিধিসহ আরো কয়েকজন মিলে অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
২০০৫ সাল থেকে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে চক্রটি ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ১০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এর মধ্যে ২০০৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের অংশীদার ডা. মহসিনুজ্জামান চৌধুরী জেলার লাকসাম উপজেলার মুদাফরগঞ্জে মিডল্যান্ড হসপিটাল ইউনিট-২ নাম দিয়ে ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে তিনি ১০টি দোকান বরাদ্দের নামে অসত্য তথ্য দিয়ে আরো ৩০ লাখ টাকা নেন। কিন্তু হাসপাতালের অর্থ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্সসহ আমরা বিষয়টি জানি না।
আরেক অংশীদার ডা. মো. শহীদুল্লাহ ১৫ লাখ টাকা হাসপাতালের চেয়ারম্যান হিসেবে নগদ গ্রহণ করেন। ডা. খোরশেদ আরো বলেন, হাসপাতালের শেয়ারহোল্ডার ডা. মো. মুজিবুর রহমান ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে চারটি জাল ভোট দেন। বিধি লঙ্ঘন করে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর অবৈধ অ্যাডহক কমিটির অর্থ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স পরিচালক হন তিনি।
ডা. মো. শহীদুল্লাহও বিধি লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান হয়েছেন। পরে চলতি বছরের ৩০ জুন ডা. মো. মুজিবুর রহমান পদত্যাগ করেছেন। কমিটির সদস্যদের তিনজনের মধ্যে নাছিমা আক্তার নামে একজনও পদত্যাগ করেছেন। ২০০৬ সালে ডা. সমীর কান্তি সরকার অর্থ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স পরিচালক এবং পরিচালক ডা. গোলাম মোর্শেদ তাদের সহযোগিতা করেন এবং চক্রটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এছাড়া হাসপাতালের কর্মচারী সৈয়দ নুরুল ইসলাম, অমল চন্দ্র দেবনাথ, আবদুল জলিল ও সাইফুল ইসলাম ওই পাঁচ অংশীদারের যোগসাজশে ২০০৫ সাল থেকে ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৪ কোটি ৫২ লাখ ৯৩ হাজার ১০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
ডা.খোরশেদ আলম বলেন, ২০১৯ সালের ২৬ জুলাই সর্বাধিক ভোট পেয়ে হাসপাতালের অর্থ ও কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স পদে নির্বাচিত হই। এরপর ওই বছরের ১ আগস্ট দায়িত্ব নিয়ে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি দেখতে পাই। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করায় চক্রটি এখন আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। প্রশাসনের কাছ দাবি জানাচ্ছি, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এদিকে, এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মো. শহীদুল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. মহসিনুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি এই হাসপাতালের কোনো শেয়ারহোল্ডার বা মালিক না। সুতরাং টাকা আত্মসাৎ করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। মূলত আমার স্ত্রী ওই হাসপাতালের শেয়ারহোল্ডার।
গত বছরের ডিসেম্বরে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে আমার স্ত্রী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে ডা. খোরশেদও একই পদে প্রার্থী হন। কিন্তু নিজের অবস্থান নড়বড়ে দেখে তিনি নির্বাচনের সকল কাগজপত্র চুরি করে পালিয়ে যান। এরপর থেকে বিভিন্নভাবে আমাদের নামে মিথ্যাচার এবং হয়রানি করছেন তিনি। হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. মো. শহীদুল্লাহ এসব বিষয়ে আরো ভালো বলতে পারবেন।
সূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ