১৪ শিশুর ঈদ কাটবে কুমিল্লা কারাগারে
ঈদ উপলক্ষে বন্দিদের জন্য ভিন্ন রকম আয়োজন করেছে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার। ঈদের আনন্দ বন্দিদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এ আয়োজন করা হয়েছে। নারী বন্দিদের সঙ্গে থাকা শিশুদের দেওয়া হবে নতুন পোশাক। নারীদের জন্য বিশেষ কসমেটিকস আর পুরুষদের জন্য নতুন পোশাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা কারাগারে বর্তমানে দুই হাজার ৬২৭ বন্দি আছেন। এর মধ্যে ১২৭ বন্দি নারী। তাদের মধ্যে ১৪ জন নারীর ১৪ শিশুসন্তান বর্তমানে মায়ের সঙ্গে কারাগারে ঈদ করবে। এসব শিশুর ঈদের দিনের আনন্দের কথা চিন্তা করে মেয়ে শিশুদের জন্য নতুন ফ্রক, সালোয়ার-কামিজ, গেঞ্জি ও ছেলে শিশুদের জন্য শার্ট-প্যান্ট, ফতুয়া, পাঞ্জাবি ও টিশার্ট কিনেছে কারা কর্তৃপক্ষ। চাঁদ দেখা গেলেই তাদের হাতে এসব উপহার তুলে দেবেন কারাগারের কর্মকর্তারা। এর আগে তাদের হাতে দিলে শিশুরা সেগুলো নষ্ট করে ফেলবে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, ১২৭ নারী বন্দিকে বিভিন্ন কসমেটিকস দেওয়া হবে। যেমন মেহেদি, টিপ, লিপস্টিক, আলতা, ক্রিম, চুড়ি, চুলের ব্যান্ড, চুলের ফিতাসহ বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস। প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণী বন্দি, যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে মেহেদি পেয়ে রাঙিয়েছেন হাত। ঈদ আনন্দে অন্য বন্দিদের সঙ্গে মেতেছেন খোশগল্পে।
পুরুষদের প্রায় সবার বাড়ি থেকেই নতুন পোশাক এসেছে কারাগারে। তবে কয়েকজন বাকি আছে। তাদের নতুন পোশাক দেওয়ার কথা ভাবছে কারা কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ঈদের আগের দিন ও ঈদের দিন কারাগারে বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হবে। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যায় পোলাও, মুরগি, ডাল ও সবজির আয়োজন থাকবে। ঈদের দিন কারাগারে ঈদের নামাজ হবে। ঈদের নামাজ শেষে প্রতিজনকে ২০ মিনিট করে পরিবারের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এছাড়া সবার জন্য হরেক রকমের পায়েস রান্না করা হবে। তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে দেওয়া হবে।
দুপুরে তাদের জন্য মুরগির রোস্ট, পোলাও, গরুর মাংস, খাসির মাংস, মাছ, ডিম, ভর্তা, ভাত, ডাল রান্না করা হবে। খাবারের শেষে কোমলপানীয় এবং মিষ্টি, চমচম খাওয়ানো হবে তাদের সবাইকে। এভাবে ঈদের দিন রাতেও বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, কুমিল্লা কারাগারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দি আছেন ৮৭ জন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন নারী বন্দি। ৮৭ জনের মধ্যে দুজনের ফাঁসির আদেশ কার্যকরের অপেক্ষায় আছে। আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যেই তাদের ফাঁসি হয়ে যাবে। হয়তো এটা তাদের শেষ ঈদ। তাই তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শাহজাহান আহমেদ বলেন, ‘কারাগার মানুষের ভুল সংশোধন হওয়ার জায়গা। মানুষ নিজেকে বদলায়, নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়। তারাও মানুষ। তাদের পরিবার-পরিজন আছে। আমরা তাদের কাছাকাছি থাকি। তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ না করে আমরা থাকতে পারি না। তাই আমাদের এসব আয়োজন। আমি হলফ করে বলতে পারবো, কুমিল্লা কারাগারে বন্দিরা যত সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। অন্য কারাগারগুলোতে এত সুযোগ-সুবিধা পান না বন্দিরা।