কুমিল্লার এমপি বাহারের বিরুদ্ধে আবারও অভিযোগ সাক্কুর
কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে আবারও দুইটি অভিযোগ তুলেছেন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু। ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহার নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে স্থানীয় শিক্ষক, ইমামদের কুসিকের (কুমিল্লা সিটি করপোরেশন) নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত করেছে’- রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে এমনটাই জানিয়েছেন মনিরুক হক সাক্কু।
শনিবার (১১ জুন) সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী লিখিত দুইটি অভিযোগ পাওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রথম অভিযোগপত্রের বিষয়ে জানিয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, নির্বাচনী বিধিমালা লঙ্ঘন করে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত বিভিন্ন মসজিদের ইমামদেরকেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নির্দেশ দিয়েছেন এমপি বাহার। এমন অনৈতিক নির্দেশনার কারণে শিক্ষক ও ইমামরা নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর প্রচারণা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগপত্রের বিষয় জানিয়ে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ইতোমধ্যে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত এবং সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে সিটি করপোরেশনের আওতার বাইরে থাকা এলাকার জনপ্রতিনিধি, দলীয় কর্মী ও বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন করে জনসমাগম, মিছিল ও শো-ডাউন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের দ্বারা জনসমাগম ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। এটিও পরিষ্কারভাবে নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন।
দুইটি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ‘বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের’ দাবিও জানান মেয়র পদের স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। দুইটি অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর দুইটি অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখবো।
তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে আছে ইসি ও স্থানীয় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, কুমিল্লা-৬ আসনটি আদর্শ সদর, সিটি করপোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এই আসনের সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদেও আছেন। নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, কোনো সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রচারে অংশ নিতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকার ভোটার হলে শুধু ভোট দিতেই নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারেন।
বিষয়টি উল্লেখ করে ৬ জুন এমপি বাহাউদ্দিন বাহারের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেন সাক্কু।
লিখিত অভিযোগে প্রার্থী হিসেবে তিনি জানান, স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মহানগর দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ মাদ্রাসার প্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণের সঙ্গে ও আদর্শ সদর উপজেলার নেতাকর্মীদের একত্রিত করে সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি জানান, পার্শ্ববর্তী সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার নেতাকর্মীদের নির্বাচনি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিয়ে সভা ও আলাপ আলোচনা করে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছেন। যে কারণে, স্থানীয় নেতাকর্মীরা নির্বাচনি এলাকায় মোটর সাইকেল শোডাউনসহ নির্বাচনী সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। তেমনি সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে ঠিক তেমনি আতঙ্কও সৃষ্টি করা হচ্ছে।
এ সময় সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের স্বার্থে, ভোটারদের মনে আতঙ্ক দূর করতে স্থানীয় সংসদ সদস্যের অবৈধভাবে নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করে নির্বাচনি কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করেন মনিরুল হক সাক্কু। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ জুন নির্বাচন কমিশন এমপি বাহারকে এলাকার ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
কিন্তু শনিবারও তিনি কুমিল্লায় নির্বাচনি এলাকায় ছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জানতে চাইলে আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার বলেন, এলাকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে সব মানুষের জন্য অনেক দায়িত্ব আমার। সেই দায়িত্ব পালন করাও আমার নৈতিক দায়িত্ব। কারণ মানুষ আমার কাছে আসলে তো আমি আর কাউকে ফিরিয়ে দিতে পারি না। আর তাই নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ আসলে মিথ্যা।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। এবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০। এর মধ্যে নারী ভোটার এক লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। এর আগে দুই নির্বাচনেই মেয়র পদে ভোটে নির্বাচিত হন মনিরুল হক সাক্কু। প্রথমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং দ্বিতীয়বার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।