ম্যাজিস্ট্রেটের পা ধরাটাই বাকি ছিল চৈতির

‘সামথিং ফিশি’ নামে একটি ফুডকার্ট চালাতেন চৈতি কর্মকার নামে এক নারী উদ্যোক্তা। বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় সেটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

এ ঘটনার আগে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে এমনটি না করতে অনুরোধ জানান চৈতি। শুধু পা ধরার বাকি ছিল সরকারি ওই দায়িত্বশীলের।

কিন্তু তার কোনো কথাই শোনা হয়নি।
নগরের নিউমার্কেট সংলগ্ন শিক্ষা কমপ্লেক্স ভবনের সামনের এ ঘটনাটি নিয়ে এভাবেই আফসোস করছিলেন চৈতি কর্মকার।

ঘটনার প্রভাবে তিনি এখন মর্মাহত।
চৈতি বলেন, আমার ফুড কার্টটি দিনের বেলা বন্ধ থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে দিনের বেলা কার্টটি তুলে নিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি আমার জানা ছিল না। সন্ধ্যায় যখন দোকান খুলি তখন সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেটসহ লোকজন আসেন। তারা আমাকে আমার কার্টটি সরিয়ে নিতে বলেন। আমি তাদের জানাই, কার্টটি সরিয়ে নিতে আমার বাড়তি লোক দরকার। আমার নিজের পক্ষে একটি সরানো সম্ভব না। আমাকে একটু সময় তিনি।

তিনি আরও বলেন, লোক এনে কার্ট সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হলেও তারা আমার কথা শোনেননি। সেখানে দায়িত্বশীল ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে বলেন, তালে আমরাই সরিয়ে (ফুড কার্ট) দিচ্ছি। এ কথা বলেই কার্টটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি ওই ম্যাজিস্ট্রেটের শুধু পা ধরা বাকি রেখেছি। তিনি আমার কোনো কথা-ই শুনতে চাননি। আশপাশে অনেক দোকান ছিল। সেগুলো ভাঙা হয়নি।

সচেতন নাগরিক কমিটি কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু ঘটনাটিকে অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে সিটি করপোরেশন কাজ করবে এটা ঠিক। কিন্তু কারোটা রাখবে, কারোটা ভাঙবে এটা ঠিক না। এ উদ্যোক্তা (চৈতি) বাবাহীন৷ তিনি এখান থেকে আয় করে মা, নানি ও ভাই-বোনদের খরচ বহন করতেন। তার উপার্জনের বাহন ভেঙে দেওয়া অত্যন্ত অমানবিক কাজ। তাকে সুযোগ দেওয়া যেত। যারা এ কাজটি করেছেন, তারা ঠিক কাজ করেননি।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও সংশ্লিষ্ট এলাকার কাউন্সিলর হাবিবুর আল আমিন সাদী জানান, সিটি করপোরেশন থেকে কোনো স্থাপনা উচ্ছেদ করলে আগে থেকে তিন-চারবার জানানো হয়। তারপর অভিযান পরিচালিত হয়। ভুক্তভোগী নারীর ক্ষেত্রেও তাই হওয়ার কথা। তারপরও ওই উদ্যোক্তা যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহায়তা করা হবে।

চৈতী কর্মকারের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তার বাবা স্বর্ণ ব্যবসা করতেন। শৈশবে বাবাকে হারান তিনি। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার পাঁচগাছিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হন চৈতি। কুমিল্লা কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি দেওয়ার পর ঢাকার একটি কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। এর মধ্যেই সরকারি চাকরি হয় তার। কিন্তু মায়ের অনুরোধে সেটি করা হয়নি। পরবর্তীতে কুমিল্লা শহরে এসে রানীর দিঘির পাড়ে একটি বাসায় মা ও নানিকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর একটি কোর্সও করা আছে তার।

মাঝে এক বছর হোটেল রিজেন্সিতে কাজ করেন। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে কুমিল্লায় খাবারের দোকান দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। কিন্তু বড় পুঁজি না থাকায় মা ও নিজের গয়না বন্ধক রেখে একটি ফুড কার্ট ভাড়া নেন। পরে সেটি ৪০ হাজার টাকায় কিনে নেন চৈতি। নাম দেন সামথিং ফিশি। তার ফুড কার্টে কাঁকড়া মাসালা, লইট্টা ফ্রাই, রূপচাঁদা ফ্রাই, স্কুইড মাসালা ফ্রাই, অক্টোপাস মাসালা ফ্রাই পাওয়া যেত। এ ছাড়া চিকেন টিক্কা বার্গার, চিকেন পাকোড়াও বিক্রি করতেন চৈতি। কুমিল্লায় সি-ফুডের রেস্টুরেন্ট দেওয়ার পরিকল্পনাও করছিলেন এ নারী উদ্যোক্তা।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ছামছুল আলম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খবর নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরো পড়ুন