প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হলে পরীক্ষা বাতিল: পিএসসি

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেছেন, সদ্য শেষ হওয়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি প্রমাণিত হয়, তবে সেটি বাতিল করা হবে। তবে পূর্বের পরীক্ষাগুলো নিয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) এসব কথা বলেন তিনি। পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, এরইমধ্যে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের পর অগ্রগতিও জানানো হবে।

কমিশনের যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, নিয়ম অনুযায়ী তাদের সাসপেন্ড করা হবে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে পরীক্ষাগুলোর কথা বলা হয়েছে ১২ বছরের, আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি ওইসব পরীক্ষা নিয়ে। ফলে সেটিই প্রমাণ করে পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠু হয়েছে।

পিএসসির গাড়িচালক আবেদ আলীর বিষয়ে তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন নির্ধারণ ও সাপ্লাই করা হয়, সেখানে প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। তবে এ কার্যক্রমের সাথে যেহেতু অনেকেই জড়িত থাকেন, তাই শতভাগ নিশ্চিতভাবেও বলা যায় না।

যদি কোনো অভিযোগের প্রমাণ মেলে, তাহলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে-এ কথা জানিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই প্রশ্ন বানিয়ে ফেসবুকে আপলোড করেন এবং সেটিকে পিএসসির প্রশ্ন দাবি করেন।

এখন পর্যন্ত সিআইডি থেকে কোনো প্রতিবেদন পাইনি, তাই আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাসপেন্ড লেটার তৈরি করা হয়নি। গ্রেফতার দেখানোর সাথে সাথেই তাদেরকে সাসপেন্ড লেটার দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে পিএসসি জানিয়েছে, বিসিএসের প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশনের একজন যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রশ্নফাঁস নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তার ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। তারপরও পুরো ঘটনাটি আরও অধিকতর তদন্ত করতে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম খানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন- কমিশনের পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক।

গত ১২ বছরে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ সকালে তাদের আসামি করে রাজধানীর পল্টন থানার মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) অধীনে নেয়া ১২ বছরের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে কোনো অভিযোগ ছিল না। এ বিষয়ে দেশের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনের কারণে বিপিএসসির ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
সোমবার (৮ জুলাই) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন অভিযোগ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি বলেছে, বেসরকারি টেলিভিশন রোববার (৮ জুলাই) পাবলিক সার্ভিস কমিশনের অধীন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের নিয়োগ পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এবং অন্যান্য নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রচার করেছে, সে বিষয়ে বিপিএসসি’র দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।

গত এক যুগে বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে চ্যানেল-২৪ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, গত ১২ বছরে বিপিএসসি-তে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষা সম্পর্কে কোনো মহল থেকে কখনোই কোনো ধরনের অভিযোগ বা অনুযোগ ছিল না, বিধায় এটি প্রমাণিত যে, ওই সকল পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময়ে অনুষ্ঠিত বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে নতুন করে কোনোরূপ অভিযোগ উত্থাপনের অবকাশ নেই। প্রতিবেদনে গত ১২ বছরে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত এ সব পরীক্ষার বিষয়ে বিরূপ প্রচার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিএসসির ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে পিএসসি আরও জানায়,গত ৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ শুক্রবার অনুষ্ঠিত রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার “উপসহকারী প্রকৌশলী” পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ঐদিন পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে আসে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রতিটি বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৬ সেট প্রশ্নপত্র এবং নন-ক্যাডার পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কোন সেটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা নির্ধারণ করতে পরীক্ষা শুরুর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পূর্বে লটারি করা হয়। বিসিএস ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে লটারির সময় দেশের প্রথিতযশা দুইজন নাগরিক, কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ উপস্থিত থাকেন। একইভাবে, নন-ক্যাডার পরীক্ষার ক্ষেত্রে কমিশনের চেয়ারম্যান, দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ও পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট সদস্যসহ কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ উপস্থিত থাকেন।

গত ৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ শুক্রবার বাংলাদেশ রেলওয়ের নন-ক্যাডার “উপসহকারী প্রকৌশলী” পদের নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে একই নিয়ম অনুসরণ করে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে লটারি করে কোন সেটের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, সে বিষয়টি সকাল সাড়ে ৯টায় সংশ্লিষ্টদের এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে পিএসপি দাবি করে, কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে তা পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে কারোরই জানার সুযোগ নেই। কমিশনের আওতাভুক্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, প্রশ্নপত্র সমীক্ষণ ও মুদ্রণ সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে করা হয় এবং তা যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। এ সব কারণে পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি যে কোনো ব্যক্তির নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে সে বিষয়ে কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ থাকে। কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠানের দুইদিন পরে চ্যানেল-২৪ কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ কিনা তা নিশ্চিত হবার কোনো সুযোগ নেই।

বিপিএসসি’র কার্যক্রম ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণ সমাজসহ জনমনে সুদৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। বিপিএসসি’র নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রম সকল মহলে প্রশংসিত হচ্ছে। সেই আস্থা ও বিশ্বাস সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে যথাসময়ে অভিযোগ না হওয়া সত্ত্বেও যদি কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ গত ০৫ জুলাই ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বা প্রতারণা বা অন্য কোনো অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িত প্রমাণ হয়, তাহলে কমিশন সংশ্লিষ্টের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলেও জানায় পিএসসি।

আরো পড়ুন