আলমগীরের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলেই মিলত সরকারি চাকরি!
প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) সহকারী পরিচালক এসএম আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে। ঢাকার মিরপুরে চাকরির কোচিং সেন্টার রয়েছে তার। আর আলমগীরের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলেই মিলত সরকারি চাকরি।
বদলগাছীতে কোলাহাট বাজারে চাকরির কোচিং সেন্টার খুলেছিলেন তিনি। তার কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে এলাকার অন্তত ৯০ জন তরুণ ও যুবক বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দপ্তরে চাকরি পেয়েছেন। বদলগাছীতে কোলাহাট এলাকায় আলমগীরের প্রতিবেশী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত রোব ও সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আলমগীরের বাবা আবুল কাশেম আগে দিনমজুর হিসেবে মানুষের জমিতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। নওগাঁর বদলগাছীর কোলা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন তিনি।
পরবর্তীতে মানুষের বাড়িতে জায়গীর থেকে কুষ্টিয়ার একটি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন। এক যুগ আগে পিএসসিতে যোগদান করেন আলমগীর। পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তিনি পিএসসির সহকারী পরিচালক হন।
কোলাহাট বাজারসংলগ্ন গয়ড়া সরদারপাড়া গ্রামে তার বৃদ্ধ বাবা ও মা থাকেন। চার ভাই-বোনের মধ্যে আলমগীর সবার বড়। ছোট ভাই এসএম হুমায়ুন কবির শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করেন এবং ছোট বোন মিনা আক্তার রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাঁটলিপি মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করেন।
রাজধানীর মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের সরকারি বাসভবনে পরিবার নিয়ে থাকেন আলমগীর কবির। মিরপুরে ‘জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট’ নামের একটি চাকরি প্রস্তুতি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন তিনি। বছর দেড়েক ধরে কোচিং সেন্টার ব্যবসা নিয়ে আলমগীরকে এলাকায় বেশ সরব দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বদলগাছীর কোলাহাট বাজারে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে মিরপুরে পরিচালিত জব কর্নার সাঁটলিপি অ্যান্ড কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নামের কোচিং সেন্টারের একটি শাখা খোলেন। অবশ্য আট-নয় মাস চলার পর কোলাহাটের সেই কোচিং সেন্টারটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
কোলাহাট বাজারের মিম ভ্যারাইটি স্টোর নামের একটি প্রসাধনী দোকানের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন বলেন, চাকরির লাইনঘাটের জন্য এলাকায় আলমগীরের খুব নামডাক আছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকার অনেক বেকার ছেলে-পেলে সরকারি অফিসে চাকরি পাইছে। নিজের এক ভাই সিক্স-সেভেন পাশ, তাক (তাকে) মন্ত্রণালয়ে ড্রাইভারের চাকরি পাইয়ে দিছে। আর এক বোন জজকোর্টে চাকরি পাইছে। আলমগীরের সঙ্গে লাইনঘাট করে শুধু কোলা ইউনিয়নে গত চার-পাঁচ বছরে ৮০-৯০ জন চাকরি পাইছে। এখন বুঝতে পারছি সেই লাইনঘাট কিভাবে করত।
কোলা কলেজের প্রভাষক বেলাল হোসেন বলেন, কোলাহাট বাজার প্রত্যন্ত এলাকার একটা বাজার। এই বাজারে বছর দেড়েক আগে চাকরির প্রস্তুতির কোচিং সেন্টার গড়ে ওঠে। সেই কোচিং সেন্টারে পড়লে নাকি সরকারি অফিসে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি পাওয়া সহজ হবে। এলাকার অনেক বেকার তরুণ চাকরিও পাইছে। তাদের কেউ সচিবালয়ে কম্পিউটার অপারেটের, কেউ সাঁটলিপিকার, আবার অনেকে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির বিভিন্ন পদে চাকরি পাইছে। এই গ্রেফতারের পর এখন কিছুটা অনুমান করা যাচ্ছে, কি কারিশমাই এদের চাকরি হইছে।
মঙ্গলবার বিকালে আলমগীর কবিরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তার বাবা আবুল কাশেমের (৭৫) সঙ্গে। ছেলের গ্রেফতারের বিষয়ে বলেন, শুনতেছি ছেলেকে নাকি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কী কারণে গ্রেফতার হয়েছে তা কিছু জানি না। ছেলে-মেয়ে, জামাই কেউ কিছু বলছে না। ছোট ছেলে ও মেয়ে জামাই থানা-পুলিশের কাছে দৌড়াদৌড়ি করছে।
আলমগীরের প্রতিবেশী এসএম আব্দুর রউফ বলেন, আলমগীর আমাদের গ্রামেই অন্তত ৪০-৫০ জন ছেলে-মেয়েকে চাকরি দিছে। এখন সেগুলা সঠিক পথে না অন্যায় পথে চাকরি দিছে এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না। যারা চাকরি পাইছে তারা টাকা-পয়সা দিয়ে দুর্নীতি করে চাকরি পাইলে তো আর এখন স্বীকার করবে না। এখন হয়তো সরকারিভাবে তদন্ত করলে কে কে অন্যায়ভাবে চাকরি পাইছে তা বের হয়ে আসতে পারে।
আলমগীরের আরেক প্রতিবেশী খোকা মিয়া বলেন, আলমগীর এলাকায় তেমন সম্পদ করেনি। এখন ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি কিংবা জমিজমা কিনেছে কিনা, তা বলতে পারব না।