এ বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, ভবিষ্যতের জন্য প্রতিজ্ঞা : চিফ প্রসিকিউটর

২০২৪ সালের ‘জুলাই গণআন্দোলন’-এর সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।

রবিবার (১ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে ১৩৪ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র উপস্থাপন করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তিনি বলেন, “এ বিচার অতীতের প্রতিশোধ নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিজ্ঞা।”

ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে এই কোর্ট প্রসিডিংস সরাসরি সম্প্রচার করছে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এর আগের দিন, শনিবার (৩১ মে) জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞের বিচার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে, এবং বিচার এমনভাবে সম্পন্ন হবে যেন তা নিয়ে কারও মানগত প্রশ্ন না উঠে।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর ১৪ আগস্ট তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর তদন্ত শুরু করে এবং ছয় মাস ২৮ দিন পর ২০২৫ সালের ১২ মে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়।

পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি ছিল মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম ‘বিবিধ মামলা (Misc Case)’। ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর মামলার প্রাথমিক শুনানিতে ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরবর্তীতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে একই মামলায় আসামি করা হয়।

গণআন্দোলন দমনে সরকারি বাহিনীর সহিংস অভিযানে সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। আন্দোলন দমনে গৃহীত এই সহিংস পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরো পড়ুন