হাসিনা প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ফিরিয়ে দিয়েছি: কর্নেল অলি

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, আমি অনেকবার প্রস্তাব পেয়েছিলাম, ১৯৯৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত যখন কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে তখন আমি যোগাযোগমন্ত্রী ছিলাম। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তারই চাচা হাফিজ এবং আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম আ.খ.ম জাহাঙ্গীরকে আমার কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারা দুজনই আমার বাসায় এসেছিলেন। শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার একাধিকবার কথাও হয়েছিল। তারা আমাকে বলেছিলেন একটা পার্লামেন্টের ক্যু হবে। ক্যুর পক্ষে আওয়ামী লীগের তখন সদস্য ছিল ১৪৩ জন আর বিএনপির ৪০ জন। মোট ১৮৩ জন একত্রিত হয়ে পার্লামেন্টে একটা বিল উত্থাপিত হবে। সেই বিলের মাধ্যমে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পদচ্যুত করা হবে এবং আমি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেব।
কিছুদিন আগে জনপ্রিয় উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের লাইভ টক শো ঠিকানা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় খালেদ মুহিউদ্দিনের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কর্নেল অলি। ভিডিওটি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই এটি লাইক ও শেয়ার দিচ্ছেন।
কর্নেল (অব.) অলি বলেন, আমার সঙ্গে মোট তিন দিন এটা নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথম দুদিন আমি রাজি হয়েছিলাম। তৃতীয় দিন আমি চিন্তা করলাম আমাকে বেগম জিয়া যোগাযোগমন্ত্রী বানিয়েছেন। যদিও আল্লাহর হুকুমে আমি হয়েছি। তারপরও তিনি আমার প্রধানমন্ত্রী। তার সঙ্গে যদি আমি এ ধরনের একটা বেঈমানি করি, একটা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আগামী দিনে মানুষ আমার সম্পর্কে বা মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে খারাপ ধারণা পোষণ করবে।
তিনি বলেন, আমি নিজেই জায়নামাজে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমি এই ধরনের একটা লোভে পড়েছি প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছি কালকে সকালে। পরে আমি কিন্তু তৃতীয় দিন রাতে তাদের এই প্রস্তাবে রাজি হই নাই। তখন আ.খ.ম জাহাঙ্গাীর আমাকে অনুরোধ করলেন রাতে দেড়টায় যেন আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সঙ্গে দেখা করি। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বললাম এবং আমি তাকে বললাম আপনি যে এ কাজের জন্য যোগ্য মনে করেছেন এজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ মোবারকবাদ জানাচ্ছি। তবে আমি বিএনপির সঙ্গে এবং বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে বেঈমানি করতে পারব না। আমি এই পদ তখন রিফিউজ করেছিলাম।
এক প্রশ্নের জবাবে অলি আহমদ বলেন, তারপর ২০১৪ সালেও আমাকে অফার করা হয়েছিল, আমার দলকে অনেকগুলো পদ দেওয়া হবে। আমাকে মন্ত্রীত্ব দেওয়া হবে। আমাকে দুটি আসন দেওয়া হবে। আমাকে অনেক টাকা দেওয়া হবে। আমি সেদিনও তাদের (আওয়ামী লীগের) অফার ফিরিয়ে দিয়েছিলাম যে এই ধরনের বেঈমনি আমি করবো না। অনুরূপভাবে ২০১৮ সালেও আমাকে অফার করা হয়েছিল যে আমাকে মন্ত্রী হওয়ার জন্য এবং অনেক টাকা দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমাকে কিন্তু অনেকবার অফার করা হয়েছিল। অনেককে প্রথমবার অফার করার পরেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন।
অলি আহমেদ বিএনপির প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের সঙ্গে ছিলেন। তিনি জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। দীর্ঘদিন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত সরকার গঠন করলে দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় অলি আহমদের। একপর্যায়ে তিনি দল থেকে বেরিয়ে যান। সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সঙ্গে মিলে দল করেন। পরে বি. চৌধুরীর সঙ্গেও তার দূরত্ব তৈরি হয়। বেরিয়ে এসে নতুন দল এলডিপি গঠন করেন। সময়ের পরিক্রমায় বিএনপি সঙ্গে দূরত্ব কমে অলির। গত এক যুগেরও বেশি সময় রাজপথে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী ছিলেন অলি আহমদ।