মুরাদনগর সুমন হত্যাকান্ড, ৬মাসেও শনাক্ত হয়নি খুনি
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সুমন হত্যা ঘটনার ছয় মাস অতিক্রম হলেও এখনো শনাক্ত হয়নি খুনি, অগ্রগতি নেই মামলার। পুলিশ বলছেন বিষয়টি রহস্যঘেরা।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার টনকী ইউপির বাইড়া গ্রামের সুমন মিয়া(৩৮)কে হত্যার ঘটনায় ৬ জনকে আসামী করে দেবিদ্বার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই দেলোয়ার হোসেন বাদী হয়ে এই মামলাটি দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের ৪ মাস অতিক্রম হওয়ার পরও এখনো কোন আসামীকে আটক করতে পারেনি পুলিশ রহস্যজনক কারণে।
জানা যায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকেলে কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের গোপালনগর গ্রামের একটি ডোবা থেকে সুমন মিয়া (৩৮) লাশ উদ্ধার করেছে দেবিদ্বার থানা পুলিশ।
নিহত সুমন মিয়া মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানাধীন টনকী ইউপির বাইড়া গ্রামের বড় বাড়ির সৈয়দ আলী ডাক্তারের ছেলে।
লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিক সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কুমেক মর্গে প্রেরণ করে এবং দেবিদ্বার থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে পুলিশ।
গত ৩০শে নভেম্বর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং প্রতিবেদনে সুমনকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিজ্ঞ ৪নং আমলী আদালগতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিসট্রেট রোকেয়া বেগম গত ৭ই ডিসেম্বর উক্ত ঘটনায় হত্যা মামলা এফআইআর করার জন্য দেবিদ্বার পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পর গত ১৬ডিসেম্বর রাতে দেবিদ্বার থানায় নিহতের ভাই বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেনের দায়েরকৃত অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে রেকর্ড করেন দেবিদ্বার থানা পুলিশ।
মামলার আসামীরা হলেন, ১। আতাউর রহমান (লিটন) ২। জিয়াউল হক (টিপু)। ৩। সালমা ইসলাম (শাওন)। ৪। কামরুন নাহার (নার্গিছ) ১থেকে ৪ নং সকল আসামীর পিতা মৃত জুনাব আলী, সর্বসাং গোপালনগর, থানাঃ দেবিদ্বার, কুমিল্লা ৫। দেলোয়ার হোসেন ৬। বিল্লাল হোসেন। অজ্ঞাত ২/৩জন।
নিহতের বড় ভাই পল্লী চিকিৎসক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট ভাই মোহনের বউ ঝগড়া করে বাপের বাড়ি গিয়ে তার ছোট ভাই টিপুসহ পুলিশ নিয়ে আমার বাড়িতে এসে আমাদেরকে না পেয়ে চলে যায় থানায়। ফোনে পুলিশ আমাকে বলে থানায় আসেন আপনার ভাই ও তার বউয়ের মধ্যে জামেলা হইছে। আপনি আসলেই সমাধা হবে। সমাধার লক্ষ্যেই পুলিশের কথা মত ভাইকে নিয়ে থানায় গেলে পুলিশ আমাদেরকে আটক করে পরদিন ৮ই সেপ্টেম্বর আমাকে এবং আমার ভাই মোহনকে যৌতুকের মামলা দিয়ে কুমিল্লা জেল হাজতে প্রেরণ করে। জেলে থেকেই আমার ভাই সুমনের মৃত্যুর খবর পাই। আমি এবং আমার ভাই মোহন ১০ই সেপ্টেম্বর জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়ীতে এসে আমার ভাইয়ের লাশ দাফন করি।
দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, নিহত সুমন সহজ সরল ছিলেন। তাই যৌতুকের মামলায় তাকে তার ভাইয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকজন আসামী করেনি। দু’ভাইকে পুলিশের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আনার লক্ষ্যে ভাই মোহনের শ্বশুর বাড়িতে যায় সুমন। মোহনের শ^শুরবাড়ির লোকজন সুমনকে দেখে ক্ষেপে গিয়ে তাকে বেধরক পিটেয়ে আহত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন সুমনকে রাস্তার ধারে পরে থাকতে দেখলেও এখন কেউ মুখ খুলছে না ভয়ে। কারণ একটাই তাদের পরিবারের দু’জন সদস্য আতাউর রহমান লিটন ও জিয়াউল হক টিপু পুলিশে চাকুরী করছে। ঘটনার দিন তারা বাড়িতে থেকে আমাদেরকে গ্রেফতার করিয়েছেন মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং সহজ সরল ভাইকে পিটিয়ে হত্যা করে ডোবায় ফেলে রেখেছেন। তাই তাদেরকেও মামলার আসামী করা হয়েছে। আমরা চাই ঘটনার সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তি হোক কেননা আমরা কেউই আইনের উর্ধে নই।
অভিযোগের ভিত্তিতে মোহনের স্ত্রী সালমা ইসলাম শাওনের বক্তব্য জানার জন্য তার মোবাইল ফোনে(০১৯৫৬-১০১৭৬৩) যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
১নং আসামী আতাউর রহমানের (লিটন) মুঠো ফোনে (০১৭১৫৭১১৪৩০) একাদিকবার ফোন করে পাওয়া গেলেও এই প্রান্ত থেকে সাংবাদিক শুনে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি তিনি। ২ নং আসামী জিয়াউল হক টিপু’র মুঠো ফোনে (০১৯১৪৬৯৫৮৪২) গত দু’দিনে দিনের বিভিন্ন সময়ে ফোন দিয়েও তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি ফোন রিসিভ না করাতে।
এই বিষয়ে মামলার তদন্তকর্তা দেবিদ্বার থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. খালেদ বলেন, সুমন হত্যা মামলায় দুজন আসামী পুলিশে চাকুরী করেন, ঘটনার দিন ওই দুই আসামী বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তাদের কর্মস্থলে ওই দিন হাজির ছিলেন বলে তারা বলছেন। তাই বিষয়টি ধুম্যজালে জরিয়ে গেছে। মামলাটি রহস্যময় হলেও মামলার অগ্রগতি হচ্ছে।