কুবিতে সেশনজটের অজুহাতে বন্ধের পথে বার্ষিক শিক্ষাসফর
গোলাম কিবরিয়াঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিজ বিভাগের বার্ষিক শিক্ষা সফর আর হচ্ছে না। তবে এক দিনের বনভোজনের বিষয়ে আপত্তি নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ থেকে বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে একদিনের বনভোজন ব্যতীত শিক্ষা সফর নিষেধ করা হয়েছে। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে শিক্ষা সফরে যায় তা তাদের পড়াশুনার ক্ষতি করে। যদিও কোনো বিভাগ বার্ষিক বনভোজনে যেতে চায় তাহলে বৃহস্পতিবার রাতে যেয়ে শুক্রবার ঘুরে শনিবারের মধ্যে ফিরে আসতে হবে। এর থেকে বেশি সময় নিয়ে শিক্ষা সফরের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে অনুমতি দেয়া হবে না।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলছেন ভিন্নকথা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো অনেক বেশি বন্ধ দেয়া হয়। তখন তো সেশনজটের কথা চিন্তা করা হয়না। তাহলে শিক্ষাসফরের ক্ষেত্রে কেন এ বিষয় আলোচনায় আসবে।
শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষা সফরের পক্ষে অবস্থান নিয়ে দেখাচ্ছেন নানা যুক্তি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর দেয়া ফেইসবুকে স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়। ঐ শিক্ষার্থী তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, বিভাগে ট্যুরের আয়োজন চলছে, কিন্তু আমরা যেতে পারবো না। এতদিন যারা টিউশনির টাকা জমা করেছে তারা ট্যুরে যেতে পারবে না।সবচেয়ে কষ্টের দৃশ্য হবে যখন বাসগুলো আমাদের সামনে দিয়ে চলে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অন্তত বিশজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে শিক্ষা সফরের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের বিষয়টা বুঝা যায়। তাদের মতে, সারা বছর আমরা পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। বার্ষিক যদি একটা শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয় তাহলে সব ক্লান্তি ভুলে আবার নতুন করে পড়াশুনায় মনযোগ দিতে পারব। তাছাড়া বার্ষিক শিক্ষা সফরে গেলে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কটা অনেক বেশি গভীর হয়ে যায়। যা ভবিষ্যতে ক্লাসে অনেক কাজে দেয়। যা কোনভাবেই একদিনের বনভোজনে সম্ভব নয়। শিক্ষার্থীদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয় বিবেচনা করে বার্ষিক শিক্ষা সফরের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের (২০১৪-১৫ সেশন) শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষাসফরে যাওয়া উচিৎ আমাদের। সেখানে গেলে আমারা পুঁথিগত শিক্ষাকে বাস্তবে রুপ দিতে পারি। আর সেটা একদিনের শিক্ষা সফরে সম্ভব না। কারণ বর্তমানে দেশের প্রেক্ষাপটে যানজট অনেক বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি শিক্ষা সফর বন্ধ করে দেয় তাহলে স্কল আর কলেজের মধ্যে পার্থক্য কি থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন থেকে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক শিক্ষা সফর না থাকার কথা বলা হয়েছে। তবে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কথা বলে শিক্ষা সফর হওয়ার কথা জানা যায়। হাতেগুনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক শিক্ষাসফর না থাকলেও প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক শিক্ষাসফর রয়েছে। এমনকি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার শেষে শিক্ষা সফর হয়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা বছরে দুইটি শিক্ষা সফর পায়।
এ নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোঃ আবু তাহের বলেন, প্রতিটা বিভাগে একটি ব্যাচ স্নাতকোত্তরে দেশ বা বিদেশে শিক্ষা সফর করতে পারবে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বরাদ্দও দেয়া হবে। তবে বর্তমানে সেশনজটের কথা বিবেচনা করে ৩ থেকে ৫ দিনের শিক্ষা সফরে কোনো বরাদ্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেয়া হবে না। বিভাগ ইচ্ছে করলে কাছে কোথাও একদিনের বনভোজনে যেতে পারবে।