কুমিল্লার শতবর্ষী ঐতিহ্যের জানু মিয়া মসজিদ
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লার জানু মিয়া মসজিদ। নগরীর মুরাদপুরে দাঁড়িয়ে আছে ১৭০ বছরের সাক্ষী হয়ে। ১৮৪৯ সালে নির্মিত এ মসজিদটি কুমিল্লার প্রাচীন মসজিদগুলোর একটি। মসজিদটি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা আসেন। বিশেষ করে জুমা, শবে বরাত, শবে কদরসহ বিশেষ দিনগুলোতে এখানে মুসল্লি ও দর্শনার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়।
কুমিল্লার প্রাচীনতম মসজিদ জানু মিয়া মসজিদ। এটি জানু মিয়া মসজিদ নামে পরিচিত হলেও এর প্রতিষ্ঠাতা তাঁর দাদা খান বাহাদুর আশরাফ আলী। তিনি এ তল্লাটের জমিদার ছিলেন। ১৯৪৯ সালে দিল্লি থেকে কারিগর এনে অনেকটা দিল্লি জামে মসজিদের আদলে এটি তৈরি করা হয়।
পর্যায়ক্রমে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকলে ১৯৯০ সালে এটি সম্প্রসারণ করা হয়। ৭ হাজার বর্গফুটের মসজিদ সম্প্রসারণের পর এখন এর আয়তন ১০ হাজার বর্গফুট। মসজিদটি খান বাহাদুর আশরাফ আলী প্রতিষ্ঠা করলেও তার নাতি প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের সহচর জানে আলম চৌধুরী (উরফে জানু মিয়া) এর নামে কালের আবর্তনে পরিচিতি পেয়ে যায়। তার শিল্পি সত্বার ফলেই এমন হয়েছে মনে করেন মসজিদটির বর্তমান মোতয়াল্লী ও তার নাতী প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী ।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরী বলেন, জানু মিয়া এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেননি। ১৮৪৯ সালে মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তাঁর দাদা খান বাহাদুল আশরাফ আলী। এই প্রতিষ্ঠার পেছনে অনেক ইতিহাস আছে। দিল্লী থেকে কারিগর এনে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিলো। মসজিদের ভেতরে যত নকশা রয়েছে সবগুলো দিল্লির কারিগররাই করেছেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র আরবে রহমান মোতয়াল্লী হন। তিনি যতদিন জীবিত ছিলেন ততোদিন তার নামে মসজিদটিকে বলা হলো। তার মৃত্যুর পর আরবে রহমানের পুত্র জানু মিয়া মোতয়াল্লী হলে পরে জানু মিয়া মসজিদ নামকরণ হয় এবং এটাই শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়। জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্যের কারণে এটা স্থায়ী হয়। জানু মিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। গানবাজনা করেছেন। দুই দুইবার এসেছেন আমাদের বাড়িতে।
পরবর্তীতে এটা একটা পরিচিতি লাভ করেছে এবং এভাবেই চলছে। আমি এটাকে প্রতিষ্ঠাতার নামে নামকরণ করেছিলাম; কিন্তু সেটা কাজ হয়নি। দেয়ালের গায়েও লিপিবদ্ধ করেছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে, জানু মিয়ার শিল্প সাহিত্য বেশি কাজ করেছে।
১০ হাজার বর্গফুটের এ মসজিদটির রয়েছে ৩টি গম্বুজ, ৪টি মিনার ও ৩৬ ধরনের নকশা। মসজিদটিতে একসাথে ২ হাজার ৫শ মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। এখানে নামাজ পড়ে অন্য রকম প্রশান্তি পান মুসল্লীরা।