আন্দোলনে ছাত্রলীগকে খিচুড়ি খাওয়ানো অধ্যক্ষকে পদায়নে প্রতিবাদ
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগকে খিচুড়ি খাওয়ানো ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ইউসুফসহ দুই অধ্যক্ষকে ভিক্টোরিয়া কলেজে পদায়নের প্রতিবাদে কর্মসূচি করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে কলেজের ডিগ্রী শাখায় এ অবস্থান কর্মসূচি ও ‘প্রেতাত্মাদের স্মরণসভা’ নামে কর্মসূচি করা হয়।
জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর ঢাকা কলেজের বিতর্কিত সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইউসুফকে কলেজের বাংলা বিভাগ এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের মাহবুবুল করিমকে পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান হিসেবে পদায়ন করা হয়। পদায়নের পরই কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে ফেটে পড়ে। তোপের মুখে কলেজে আসতে পারেননি কলেজের এই দুজন শিক্ষক। হঠাৎ ২৩ জানুয়ারি বিভাগের মাস্টার্সের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত করেন শিক্ষকরা।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি কলেজের পরীক্ষা ভবনে আসেন। তখনই উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করে এবং কলাভবন থেকে কলেজের পরীক্ষা ভবন পর্যন্ত প্রতিবাদী মার্চ কর্মসূচি করেন। ২৭ জানুয়ারি আবার কর্মসূচি করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিক্ষার্থীরা। এ দিন সকাল দশটায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মসূচি শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার কর্মসূচিতে কলেজের কয়েকশো শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এসময় কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভিক্টোরিয়া কলেজ সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম, ছাত্রদল নেতা ওমর ফারুক, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন শিহাব, কলেজ শাখা ছাত্র শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল ইসলাম, বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শরীফ আব্দুল্লাহ ও আরমান হোসেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে পাঁচ কর্মদিবসের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক জাহিদুল ইসলাম বলেন, পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে যদি ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ওনাদের পদায়ন বাতিল না করা হয় তাহলে প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে। আমরা দেখছি ভিক্টোরিয়া কলেজকে প্রেতাত্মাদের ডাম্পিং স্টেশন করা হচ্ছে। যতসব অপরাধীকে ভিক্টোরিয়া কলেজে দিয়ে কলেজের মান সম্মান ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা হচ্ছে। আমরা এসবের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এসময় কলেজের বাংলা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞানসহ ২২টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য প্রদান করে আন্দোলনের একাত্মতা ঘোষণা করেন। সর্বশেষ বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হাসান পল্লব পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, আগামী বুধবার ক্যাম্পাসে জনমত গঠনের জন্য হ্যান্ড বিল বিতরণ করা হবে এবং পরবর্তীতে আরো কঠিন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দুই স্বৈরাচারের দোসরকে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিদায় করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল বাসার ভূঞাকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি৷
উল্লেখ্য, ছাত্র জনতার আন্দোলনের পরবর্তীতে ছাত্রদের তোপের মুখে প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুফ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করলে তাকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে বাংলা বিভাগে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে পদায়ন করা হয়। তার বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগকে হলে রেখে খিচুড়ি খাওয়ানোসহ নানান অপকর্মের অভিযোগ উঠে। অপরদিকে প্রফেসর মো. মাহবুবুল করিমের বিরুদ্ধেও দুর্নীতিসহ নানান অভিযোগে শিক্ষার্থীরা লক্ষীপুর সরকারি কলেজ থেকে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করলে পরবর্তীতে তাকে ভিক্টোরিয়া কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে পদায়ন করা হয়।