চার প্রধানের বাড়িই বৃহত্তর কুমিল্লায় !
ডেস্ক রিপোর্টঃ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুটি বাহিনী সেনাবাহিনী ও পুলিশ এবং সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সর্বোচ্চ পদে থাকা তিনজনের বাড়িই বৃহত্তর কুমিল্লার চাঁদপুর। তাছাড়া প্রধান বিচারপতির বাড়ি কুমিল্লা নাঙ্গলকোট উপজেলায়।
প্রধান বিচারপতিঃ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর কুমিল্লায় নাঙ্গলকোট উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম সৈয়দ মুস্তফা আলী ও মায়ের নাম বেগম কাওসার জাহান।
বিএসসি ডিগ্রি নেওয়ার পর এলএলবি ডিগ্রি নিয়ে ১৯৮১ সালে আইন পেশায় যুক্ত হন তিনি। তার দুই বছর পর ওকালকি শুরু করেন হাই কোর্টে। ১৯৯৯ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হন। আর ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এর পর ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
সেনাবাহিনীর প্রধানঃ ১৮ মে বাংলাদেশ সরকার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করে। আগামী ২৫ জুন থেকে তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবির) সাবেক এই মহাপরিচালক। জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে সেনাপ্রধান হতে যাচ্ছেন তিনি।
আজিজ আহমেদ ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরে।
২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর বিজিবির মহাপরিচালক (ডিজি) হিসেবে দায়িত্ব নেন আজিজ। ২০১৬ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন তিনি। বিজিবির ডিজি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ৩৩তম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক ছিলেন তিনি।
আজিজ আহমেদ অষ্টম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশনপ্রাপ্ত হন। তিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রামে জিএসও-৩ (অপারেশন), পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজর, সেনাসদর প্রশিক্ষণ পরিদফতরের গ্রেড-২ এবং সেনাসদর, বেতন ও ভাতা পরিদফতরের গ্রেড-১ স্টাফ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন স্কুল অব আর্টিলারি এবং স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রশিক্ষক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আজিজ আহমেদ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। তার বাবা ওয়াদুদ আহমেদ বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন।
পুলিশের মহাপরিদর্শকঃ বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী চাঁদপুর সদর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ২৯তম মহাপরিদর্শক হিসেবে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করেন।
১৯৮৪ সালে ষষ্ঠ বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হয়ে ১৯৮৬ সালে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশে যোগ দেন জাবেদ। চাঁদপুরের বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ কল্যাণ বিষয়ে স্মাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। বিশাল কর্মজীবনে নানা ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেলজীবনের ওপর লেখা গ্রন্থ ‘কারাগারের রোজনামচা’র বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে জাবেদ পাটোয়ারী বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
জঙ্গিবাদ দমনে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জাবেদ পাটোয়ারী ২০১০ ও ২০১১ সালে দুবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ পুলিশ পদক, বাংলাদেশ পুলিশ মেডেলে (বিপিএম) ভূষিত হন। এ ছাড়া তিনি দুবার ‘আইজিপি’স এক্সাপ্লেরি গুড সার্ভিস’ ব্যাজ লাভ করেন। সন্ত্রাসবাদের ওপর তার পিএইচডি ডিগ্রি আছে।
দুদক চেয়ারম্যানঃ দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ ১৯৪০ সালের ৮ মার্চ চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার চরহোগলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ আবদুল লতিফ ছিলেন স্কুলশিক্ষক।
চাঁদপুরে জন্ম হলেও ইকবাল মাহমুদের স্কুল জীবন শুরু হয় সাতক্ষীরার আশাশুনিতে। ১৯৭২ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে। অস্ট্রেলিয়ার নিউজ সাউথ ওয়ালেস বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে।
ইকবাল মাহমুদ বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান।