কুমিল্লায় নির্বাচনের মাঠে ‘গিন্নি ও কন্যারা’
ডেস্ক রিপোর্টঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লার ১৭টি উপজেলার ১১টি আসনে বইছে উৎসবমুখর নির্বাচনী আমেজ। বিভিন্ন ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের দিকে চেয়ে বসে নেই তাদের ‘গিন্নি ও কন্যা সন্তানরাও’। তাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন আত্মীয়স্বজনরাও।
তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণা মাঠে প্রার্থীর স্ত্রী ও কন্যাদের বেশি দেখা যাচ্ছে। গিন্নিরা তার স্বামীর ও কন্যারা পিতার মনোনীত প্রতীক নৌকা কিংবা ধানের শীষের ভোট চাচ্ছেন ঘরে ঘরে গিয়ে।
জানা যায়- কুমিল্লার ১১টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত, জাসদ, এলডিপি, ঐক্যফ্রন্ট, জোট-মহাজোট, ইসলামী আন্দোলনসহ ডজন খানিক দলের ৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও মূল লড়াই হচ্ছে নৌকা বনাম ধানের শীষের মধ্যে।
জেলার ১১টি আসনের সব কয়টি আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী থাকলেও বিএনপির রয়েছে ৮টিতে। অপর তিনটির একটি জাসদ (রব), একটি এলডিপি আর অপরটি জামায়াত ইসলামীকে দেয়া হয়েছে। যদিও তাদের প্রতীক রয়েছে ধানের শীষই। কয়েকটি আসনে ঝুঁকি নিয়েও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা কিছুটা মাঠে নামতে পারলেও অধিকাংশ আসনেই এখনো মাঠেই নামতে পারেনি। তারপরও কৌশলে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা।
সূত্রমতে- মহাজোট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে কয়েকটি শরিক দল নেতৃত্বাধীন দলের প্রতীকে নির্বাচন করছে। মহাজোটের অধিকাংশ দল নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টি অংশ নিচ্ছে লাঙ্গল প্রতীকে। যুক্তফ্রন্টের প্রার্থীরা করছেন নৌকা প্রতীকে।
এবার বিএনপির সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে যুক্ত হয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তারাও ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাছাড়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলই জোট-মহাজোটের বাইরে নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করবেন একাধিক আসনে। এরই মধ্যে প্রার্থীরা নিজ আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন জীবন সঙ্গীনী ‘ঘরের গিন্নি’। তারাও প্রচারণায় অংশ নিয়ে স্বামীর জন্য ভোট চাচ্ছেন। মায়ের সঙ্গে প্রচারণায় যাচ্ছেন কন্যারাও।
কুমিল্লা-১ ও ২ আসনে বিএনপির প্রার্থী স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। পিতাকে ভোটে বিজয়ী করতে শীত উপেক্ষা করে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন পুত্র কেন্দ্রীয় বিএনপির ড. খন্দকার মারুফ হোসেন।
মারুফ বলেন- দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মানুষের জানমাল বিএনপির হাতেই নিরাপদ। আ’লীগ অতীতে গণতন্ত্র ধবংস করেছে। গত ১০ বছরেও করেছে। তারা সংবিধানকে সংশোধন করেছে, নিজেদের স্বার্থে, ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য। আমার বাবা মোশাররফ হোসেনকে বিজয়ী করতে আমি বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভা সমাবেশ করে যাচ্ছি।
কুমিল্লা-৬ (সদর ও সদর দক্ষিণ) আসনে নৌকার মাঝি হয়েছেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এমপি। ভোটে তাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে রয়েছে স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীরা।
বাবার জন্য প্রচারণার শুরু থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ড, বাড়ি বাড়ি নারী ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন বড় মেয়ে তাহসিন বাহার সুচি। এমপি বাহারের তিন কন্যার মধ্যে তাহসিন বাহার সূচনা বড়। এমবিবিএস শেষ করে ডাক্তারী পেশায় সরাসরি যুক্ত না হয়ে সমাজ সেবা করার মানুষিকতা নিয়ে জাগ্রত মানবিকতা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেন। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংসদ সন্তান কমান্ড কুমিল্লার আহবায়ক তাহসিন বাহার সূচনা তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতা থেকে যে কোন রোগীর জরুরী মহূর্তে রক্ত সরবরাহ করেন। চলতি বছর কুমিল্লা জেলা প্রশাসন,স্বাস্থ্য বিভাগ ও আদর্শ সদর উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগীতায় এক লাখ লোকের ডাটাবেজ তৈরী করে জাগ্রত মানবিকতা।
এ সময় সূচি বলেন, ‘নৌকার পক্ষে কমিল্লায় জনজোয়ার তৈরি হয়েছে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনাকে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী করতে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে এখানকার ভোটাররা। আমরা আশাবাদী, পরিচ্ছন্ন ও উজ্জ্বল ভাবমর্যাদার এমপি বাহারকে তারা ৩০ ডিসেম্বর নৌকা মার্কায় বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন। সূচির পাশাপাশি তাঁর মা (এমপি বাহারের স্ত্রী) মেহেরুন্নেছা বাহারও নির্বাচনী বিভিন্ন এলাকায় উঠান বৈঠক, গণসংযোগ ও প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
উদ্দীপ্ত নারী ভোটাররা তুষ্টির কাছে বলতে পারছেন নিজেদের অভাব-অভিযোগ এবং চাওয়া-পাওয়ার কথা। এসব ভোটারদের কাছে তিনি ‘নারীবান্ধব’ সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ তুলে ধরছেন মেহেরুন্নেছা বাহার।
তিনি সময় নষ্ট না করে স্বামীর জন্য নিবিষ্ট প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন। ভোটের মাঠে তাকে পেয়ে খুশি দলটির নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই) আসন আ’লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এই আসনে তৃতীয় বারের মতো নৌকার কান্ডারি হিসেবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ‘আস্থা’ রেখেছেন কিংবদন্তি রাজনীতিক পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালের ওপর। এই প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে নারী ভোটারদের সঙ্গে নিয়মিতই উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তার কন্যা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারম্যান নাফিজা কামাল।
আ.হ.ম মোস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)’র আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ও কুমিল্লা (দ:) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার দু’কন্যার মধ্যে কাসফিয়া কামাল বড়। আর ছোট কন্যা নাফিসা কামাল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বিপিএলে অংশগ্রহণ করা দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের চেয়ারপারসন নাফিসা কামাল একজন নারী ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে ইতিমধ্যে নিজের অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত করেছেন। ক্রিকেট নিয়ে এগিয়ে যেতে চান বহুদূর।
তিনি বলছেন, আমার পিতা লোটাস কামাল এলাকার কল্যাণের জন্য চিন্তা করেছেন, কাজ করেছেন আপনাদের সুখ ও সমৃদ্ধির কথা চিন্তা করে এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছেন।
কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই) আসনে বিএনপির প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী কারাগারে থাকায় প্রচারণা চালাচ্ছে তার কন্যা ডক্টর চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস। পেশায় তিনি একজন অধ্যাপক। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। রাজনীতিতে বেশ অপরিচিত মুখ। তবে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজনীতির অলিগলি বেশ পরিচিত তার। পিতা মনিরুল হক চৌধুরী স্বনামধন্য মুক্তিযোদ্ধা ও কুমিল্লা ১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী। তিনি শীত উপেক্ষা করে প্রচারণার মাঠে রয়েছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে পিতার জন্য ভোট প্রার্থনা করেন।
ডক্টর সায়মা বলেন, ‘আমার পিতা মনিরুল হক চৌধুরীকে ষড়যন্ত্র করে কারাগারে পাঠিয়েছেন। আমি আমার পিতার জন্য আপনাদের নিকট ধানের শীষের ভোট ভাই। তিনি আরও বলেন- বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আমি আমার পিতার জন্য জীবনের শেষ নির্বাচনে ধানের শীর্ষ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাবো।’
তিনি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণায় অংশ নিয়ে বাবার জন্য ভোট চাচ্ছেন। কুমিল্লা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী লোটাস কামালের পক্ষে লালমাই উপজেলার ভুশ্চি কলেজ মাঠে ছাত্র ও যুব সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় বাবার জন্য ভোট চান তার কন্যা নাফিসা কামাল।
কুমিল্লা -১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেলপথমন্ত্রী মুজিব হক মুজিব মাঠে নেমেছেন। তার পক্ষে ভোটের মাঠে জনমত সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন স্ত্রী হনুফা আক্তার রিক্তা। শুরু থেকেই প্রচারণায় সক্রিয় ছিলেন তিনি। সময় নষ্ট না করে স্বামীর জন্য নিবিষ্ট প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে উঠান বৈঠক করে যাচ্ছেন স্ত্রী রিক্তা। ভোটের মাঠে তাকে পেয়ে খুশি দলটির নেতাকর্মীরা।
রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হকের স্ত্রী এ্যাড. হনুফা আক্তার রিক্তা বলেছেন, মুজিবুল হকের পাশে থেকে আপনাদের চৌদ্দগ্রামকে মনের মতো সাজাবো। চৌদ্দগ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন ইতিহাস হয়ে থাকবে, যা চৌদ্দগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এখন অকপটে স্বীকার করে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে এদেশ হবে উন্নত বিশ্বের মতো একটি উন্নত দেশ। তাই আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে মুজিবুল হককে নির্বাচিত করুন, শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করুন। দেখবেন আপনাদের চৌদ্দগ্রাম আরও উন্নত হবে।