কুমিল্লার গোমতী নদীতে অবৈধ মাটি কাটার মহোৎসব (ভিডিও)
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লায় দুই শতাধিক স্পট দেদারসে গোমতী নদীর মাটি লুটে নিচ্ছে ইটভাটা মালিক ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। আইনের কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করেই জেলার প্রায় দুইশতেরও বেশি স্পট থেকে নদীর সৌন্দর্য ও আশপাশের পরিবেশ নষ্ট এবং নদীকে ক্ষত-বিক্ষত করে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও ড্রেজার দিয়ে যে যার মতো করে মাটি এবং বালু তুলে নিচ্ছে।
রহস্যজনক কারণে নীরব পাউবো এবং স্থানীয় প্রশাসন। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বরত মাঠকর্মী ও কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করেই এসব মাটি লুট করা হচ্ছে।
যার ফলে দিন-রাত বাধাহীন মাটি লুট চলছে নির্বিঘ্নে। এ দিকে অপরিকল্পিতভাবে নদীর মাটি খননের ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে গোমতী নদীর ওপর প্রায় ১০টি ব্রিজ হুমকির মুখে পড়েছে।
কুমিল্লার ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের অহংকার গোমতী নদীর মূল্যবান মৃত্তিকা সম্পদ লুটে নিচ্ছে প্রভাবশালীরা। এক সময় এ নদীর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য উপভোগ করতে আশপাশের এলাকার লোকজন ছুটে এলেও নদীটি এখন অবৈধ ইটভাটা মালিকদের সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে তার নান্দনিক সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে। গোমতীর পাড় দিয়ে এখন আর মানুষ চলাফেরা করতে পারে না।
সরেজমিন দেখা যায়, জেলার আদর্শ সদর, বুড়িচং, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস, দাউদকান্দি উপজেলার দুই শতাধিক স্পট থেকে বেশ কিছু এলাকায় ড্রেজার লাগিয়েও নদীর মাটি ও বালু তুলে নেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মাঝে ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে মুখ খুলে কিছু বলতে পারছে না ভুক্তভোগীরা। জেলার আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া, আমতলী, নিশ্চিন্তপুর, টিক্কারচর, ছত্তখিল, রত্নমতি, চাঁনপুর, সুবর্ণপুর, গোলাবাড়ীসহ ৩০টি স্পটে, বুড়িচং উপজেলার কংশনগর, বাবুর বাজার, কামাল খাড়া, বালী খাড়া, শিমাইল খাড়া, কাড়ার খাড়া, কাহেতরা, পূর্বহারা, রামনগর, নানুয়ার বাজার, মিথিলাপুর, বাহেরচর, শ্রীপুর, গোবিন্দপুর, কোমাল্লা, মালাপাড়া, মনোয়ারপুর, হাসনাবাদ, রামচন্দ্রপুর, কুসুমপুর, এবদারপুর, বাজেহুরা, মীরপুরসহ ৫০টি স্পট থেকে, দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ, কালিকাপুর, খলিলপুর, পুরাতন বাজার, বড় আলমপুরসহ এ উপজেলার প্রায় ৩৫টি স্পট থেকে, মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ, দক্ষিণ ত্রিশ, উত্তর ত্রিশ, মালিশাইল, মুরাদনগর সদর, ধামঘর, ভুবনঘর, বাখরাবাদ, জাহাপুর, সুবিলাচরসহ ৪০টি স্পট থেকে, তিতাস উপজেলার, ঘোষকান্দি, দাসকান্দি, আসমানিয়া, খানেবাড়ী, কাউরিয়াচরসহ ২০টি স্পট থেকে, দাউদকান্দি উপজেলার, চর রায়পুর, গৌরীপুর, জিয়ারকান্দিসহ ২৫টি স্পট থেকে পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গোমতীর মাটি লুটে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই মাটি কাটার ধুম পড়ে। মাটি আনা-নেয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরগুলোতে কোনো নম্বর থাকে না। সংঘবদ্ধ চক্র মাটি কাটার জন্য নম্বরবিহীন ট্রাক্টর ব্যবহার করে। এ কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ বলেন, মাটি কাটা ও বাঁধ ধ্বংসের বিষয়টি জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। লোকবলেরও অভাবে এসব তদারকি করা যাচ্ছে না। পাউবোর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি এসব মাটি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সূত্রঃ যুগান্তর