কুমিল্লা চিড়িয়াখানায় এসে হতাশ দর্শনার্থীরা

ডেস্ক রিপোর্টঃ নামেই চিড়িয়াখানা। নেই উল্লে­খযোগ্য পশু-পাখি। হাতেগোনা কয়েকটি পশু-পাখি থাকলেও এগুলোর রুগ্নদশা। সিংহ, বাঘ, ময়ূরের খাঁচা একেবারে শূন্য পড়ে আছে। কয়েকটি খাঁচা জরাজীর্ণ। একটু বৃষ্টি হলেই চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনে পানি জমে হাঁটা-চলা যায় না। কচুরিপানা আর ঝোপ-জঙ্গল জুড়ে আছে অধিকাংশ জায়গা। বিনোদনের তেমন কোনো রাইডস কিংবা উপকরণও নেই। দর্শনার্থীরা এমন দুরবস্থা দেখে বিমুখ হয়ে ফিরে যান। এতে এখানে দিন দিন দর্শনার্থী কমছে। শুক্রবার চিড়িয়াখানায় গেলে কয়েকজন দর্শনার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে সহসা এর উন্নয়নের দাবি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৬ সালে কুমিল্ল­া নগরীর কালিয়াজুড়ি মৌজায় জেলা প্রশাসকের বাংলোর (সরকারি বাসভবন) পাশে ১০ একর ১৫ শতক জমিতে স্থাপন করা হয় কুমিল্ল­া চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। এর ব্যবস্থাপনায় রয়েছে জেলা পরিষদ। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৩৩ বছরেও এটি পূর্ণাঙ্গতা পায়নি, পারেনি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করতে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহ, ময়ূর আর টার্কি মোরগের খাঁচা একেবারে শূন্য পড়ে আছে। পশু-পাখির অধিকাংশ খাঁচায় যে কয়টি পশুপাখি রয়েছে সেগুলোও আছে অযত্ন আর অবহেলায়। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কথা হয় চিড়িয়াখানা দেখভালের কাজে নিয়োজিত জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি ঘুরে দেখান খাঁচাগুলো। পৃথক এসব খাঁচায় রয়েছে দুটি মেছো বাঘ, ১০টি বানর, তিনটি হরিণ, দুটি খরগোশ, দুটি অজগর, একটি ঘোড়া, একটি হনুমান, একটি গন্ধ গোকুল, দুটি কালেম পাখি, দুটি তিতি মোরগ, দুটি বাজপাখি ও একটি চিল। এগুলোর বেশিরভাগই রুগ্ণ দশায়। চিড়িয়াখানায় তেমন দর্শনার্থী নেই। স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল গ্রামের প্রবাসী শাহ আলম বলেন, পরিবার নিয়ে এসে প্রতিজন ২০ টাকা করে একশ টাকা দিয়ে প্রবেশ করে দেখলাম চিড়িয়াখানায় দেখার মতো দুর্লভ প্রজাতির পশু-পাখি ও জীব-জন্তু নেই। বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থাও বেহাল। খানা-খন্দে ভরা। অধিকাংশ জায়গা কচুরিপানা, ঝোপ-জঙ্গল ও আগাছায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। জোঁক ও সাপ-বিচ্ছুর ভয়, আছে মশার উপদ্রব।

ক্ষোভ প্রকাশ করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে আসা কলেজ শিক্ষিকা ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, ‘এটি এখন নামেই চিড়িয়াখানা, যেন পরিত্যক্ত বাড়ি। দেখার মতো কিচ্ছু নেই, বৃথা আসা হলো। এত কম সংখ্যক পশুপাখি নিয়ে বাংলাদেশে আর কোনো চিড়িয়াখানা আছে বলে জানা নেই। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এর কোনো উন্নতি নেই, মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। এদের কারণে অভিভাবক ও স্বজনেরা শিশু কিংবা আপনজনদের নিয়ে এখানে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না।

কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল বলেন, ‘কুমিল্ল­ার মতো প্রাচীন শহরের চিড়িয়াখানার এই বেহাল অবস্থা দুঃখজনক। এটি সংস্কার করে সাজানো প্রয়োজন।’

কুমিল্লা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. রমিজ খান বলেন, ‘বোটানিক্যাল গার্ডেনের অধিকাংশ জায়গা পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে এর অবকাঠামোর উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিকায়ন, রাইডস স্থাপন এবং জীব-জন্তু ও পশু-পাখির সংযোজন করা গেলে এটি প্রাণ ফিরে পাবে। এছাড়া এটি কোনো বেসরকারি সংস্থার নিকট দেওয়া গেলে কম সময়ে এর বেহাল অবস্থা কেটে যাবে এবং সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারবে।’

চিড়িয়াখানা ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের ইজারাদার আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে তিন বছরের জন্য ২৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছি। এখানে নিজ উদ্যোগে বোটানিক্যাল গার্ডেনে নাগরদোলা, দোলনাসহ কিছু রাইডস স্থাপন করেছি। চিড়িয়াখানায় বাঘ, সিংহ ও ময়ূর নেই। কিছু পশু-পাখি রয়েছে, যা অপ্রতুল। কচুরিপানা ও নোংরা আবর্জনায় ভরে আছে, ভেতরের রাস্তার বেহাল অবস্থা, হাঁটাচলা যায় না। প্রশাসন এদিকে কোনো নজর দিচ্ছে না। ফলে প্রতিমাসে প্রচুর টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে এর আধুনিকায়নসহ কিছু জীব-জন্তু ও পশু-পাখি আনা গেলে দর্শনার্থীদের আগ্রহ বেড়ে যাবে।’

কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, ‘চিড়িয়াখানার জরাজীর্ণ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে। এর আধুনিকায়নের জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করে এর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেবো।’

সূত্রঃ ইত্তেফাক

আরো পড়ুন