লালমাই পাহাড়ের আধিবাসীদের ঝুঁকিপূর্ণ জীবন-যাপন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কুমিল্লার ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক লালমাই পাহাড়। কোথাও পাহাড়ের মাথা জুড়ে সবুজ, কোথাও ন্যাড়া। কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলা জুড়ে এই লালমাই পাহাড়টি অবস্থিত। এ পাহাড়ের মাটি লাল হওয়ায় এর নাম লালমাই। এটি উত্তর-দক্ষিণে ১১ মাইল লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২ মাইল চওড়া। লালমাই পাহাড়ে রয়েছে অপার সমৃদ্ধির হাতছানি। ১৩ হাজার ৭শ’ ৬০ একর নিয়ে গঠিত লালমাই পাহাড়। এ পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৫০ ফুট।

এই পাহাড়ের পাদদেশ ও গা ঘেঁষে ঝুঁকিপূর্ণ ও বেহাল অবস্থায় জীবন-যাপন করছে দীর্ঘ বৎসর যাবত বসবাসকারী আধিবাসীরা। এই জায়গায় বসবাসকারী আধিবাসীরা রয়েছে প্রায় ৩৫০ জন। ব্রিট্রিশ শাসন আমলের পূর্ব থেকে আধিবাসীরা বসবাস করছে। যুদ্ধের সময় আধিবাসীরা ভারত চলে যায়। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আবার ফিরে আসে বাংলাদেশে। বর্তমানে পাহাড়ের উপরে ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রতিকুলতার মধ্যে জীবন-যাপন করছে প্রত্যেক পরিবার।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আধিবাসীরা পাহাড়ের খুব উচুতে বসবাস করছে। পায়ে হেঁটে তাদের জীবন চলাচল। প্রতিদিন আধিবাসীরা কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হাঁটছে তাদের জীবন নির্বাহের জন্য। চারদিকে পাহাড় আর গাছপালা থাকায় তাদের চলাচল করতে হচ্ছে খুব ঝুঁকি নিয়ে। পাহাড়ের উচ্চতা বেশি হওয়ায় আধিবাসীরা জীবন নির্বাহের জন্য পানি নিতে হচ্ছে নিচ থেকে। তাদের পরিবারের সদস্যরা পাহাড় থেকে নিচে নেমে পানি নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড় বেয়ে আবার ফিরে যান যার যার বাসস্থানে। ছোট্ট ছেলে মেয়েদের নেই কোন শিক্ষার ব্যবস্থা। তাদের বাচ্চারা পড়া লেখার জন্য অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আধিবাসীদের। চিকিৎসার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান কাছে না থাকায় প্রয়োজনের সময় চিকিৎসার জন্য অনেক দূরে যেতে হয়। এইভাবে চলছে প্রতিনিয়ত তাদের জীবন-যাপন।

আধিবাসী নির্মল ত্রিপরা ও লিটন ত্রিপরা জানান, আমাদের জন্ম এই জায়গায় ব্রিট্রিশ শাসন আমলের পূর্ব থেকে আমরা এই জায়গায় বসবাসকরে আসছি। যুদ্ধের সময় আমরা ভারতে চলে গিয়েছিলাম যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর আমরা আবার ফিরে আসি। আসার পর আমাদের আগের মতই রয়ে গিয়েছে অবস্থা নেই কোন কাজ কর্ম চলাচলে অনেক সমস্যা। আমাদের বাজার করতে গেলে ২ থেকে ৩ কিলোমিটার হাটতে হয়। শিক্ষার জন্য পিছিয়ে রয়েছে আমাদের জাতি। ছেলে-মেয়েদের পড়া লেখার জন্য বাসা থেকে অনেক দূর হেটে যেতে হয়। আমাদের নেত্রীত্ব দেওয়ার মত কোন লোক নেই। নেত্রীত্বের অভাবে আমরা এখনও সব দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছি।

আধিবাসী রনি রানী ত্রিপরা ও ভ্রজ লাল ত্রিপরা জানান, পূর্বে এই লালমাই পাহাড়ে আধিবাসীদের পরিমাণ অনেক ছিল। অনেক সময় অন্যান্যরা বিভিন্ন সহায়তা পেলও তা থেকে বঞ্চিত আমরা। আমাদের দেখার মত কেউ নেই। বিশেষ করে আমাদের চলাচলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। চিকিৎসার কোন ব্যবস্থা না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের।

স্থানীয় মেম্বার জামাল হোসেন বলেন, আমার পরিষদে যা আসে সবার জন্যই আসে কিন্তু আধিবাসীদের জন্য আলাদা কোন বরাদ্দ আসে না। বৃষ্টির সময় আধিবাসীরা জীবন ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে থাকেন। পাহাড়ের খুব উচুতে বসবাস করায় বর্ষার সময় তাদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। চলাচলে তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে আধিবাসীদের জন্য পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন বলে জানান।

আরো পড়ুন