কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার খাবারে টিকটিকি!
ডেস্ক রিপোর্টঃ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) একমাত্র ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ থাকা সত্বেও আজও সে সংকট কাটাতে পরেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অব্যবস্থাপনা, অপরিচ্ছন্নতা, পানির সমস্যা, বৈদ্যুতিক সমস্যা, ওয়াশরুম সংকট ও ব্যবহার অনুপযোগিতাসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাফেটেরিয়া। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট বার বার এর সমাধান চাইলেও এর তোয়াক্কা করছেন না তারা। সাম্প্রতিক ক্যাফেটেরিয়ায় খেতে গিয়ে মুরগির মাংসের মধ্যে মিলেছে এক টিকটিকি।
জানা যায়, গত ২১ আগস্ট (বুধবার) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে দুপুরে ভাত খাওয়ার জন্য যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জোহায়ের বিন কায়েস, আব্দুর রাজ্জাক ও শামিম। তারা মুরগির মাংস দিয়ে ভাত খাওয়ার এক পর্যায়ে দেখতে পায় মুরগির বাটিতে আস্ত একটি টিকটিকি। এই পরিস্থিতিতে তারা ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজারকে বিষয়টি জানিয়ে খাবার রেখে চলে আসে। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ক্যাফেটেরিয়ায় কর্মরতদের জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বিষয়টি জানে না বলে উত্তর দেয়।
তবে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, ‘আমি শুনেছি এমন একটা সমস্যা হয়েছে। তবে এটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা চেষ্টা করি খাবার ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য। ভবিষ্যতে আমরা আরও সচেতন থাকবো এ বিষয়ে।’
ক্যাফেটেরিয়ায় খেতে আসা শিক্ষার্থী জোহায়ের বিন কায়েস বলেন, সেদিন দুপুরে খেতে গিয়ে মুরগির মাংসের ভিতর টিকটিকি পেয়েছি। এতো বড় একটা টিকটিকি খাবার পরিবেশনের সময়েও তো চোখে পরার কথা। যেখানে খাবারে টিকটিকি পাওয়া যায় সেখানে আদৌ নিরাপদ খাবার কি আশা করা যায়?
শুধু ২১ তারিখই নয় এর আগেও বিভিন্ন সময়ে ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মধ্যে তেলাপোকা, মাছিসহ বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন উপাদান পাওয়া যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। অসচেতনতা এবং অপরিচ্ছন্নতাই যার মূল কারন।
সরেজমিনে ও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালের ২৫ জুলাই উদ্বোধন করা হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। এতোদিন পার হওয়ার পরেও ক্যাফেটেরিয়াতে কাটেনি সংকট। শিক্ষার্থীরা যেখানে খাবারের জন্য ভীড় জমানোর কথা সেখানে আগ্রহ হারাচ্ছে দিন দিন। ক্যাফেটেরিয়ার অব্যবস্থাপনা, সুপেয় পানির সংকট, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ, বৈদ্যুতিক পাখা, বাতির সমস্যা, ওয়াশরুম সংকট ও ব্যবহার অনুপযোগিসহ নানাবিধ সমস্যা যেন ছাড়ছেই না। সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে সুপেয় পানির সমস্যা। ট্যাবের ঘোলা পানিই বোতলে করে পরিবেশণ করা হয় খাবার জন্য। দুপুরে তাপমাত্রা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ে পানির তাপমাত্রাও। তাই বাধ্য হয়ে গরম পানিও পান করতে হয় শিক্ষার্থীদের। ক্যাফেটেরিয়ার ভিতরে চারদিকে ছড়িয়ে আছে অব্যবহার্য জিনিসপত্র। হাত ধোঁয়ার জন্য দেওয়া বেসিনগুলোর অবস্থাও নাজুক। ব্যবহার উপযোগী রয়েছে ২/৩ টি। ক্যাফেটেরিয়ায় টয়লেট রয়েছে দুটি। যা প্রায়শই থাকে নোংরা অবস্থায়। এছাড়া এর সেফটিক ট্যাংকিগুলো পরিষ্কার না করায় এখন পুরোপুরিভাবেই ব্যবহারের অনুপযোগী।
শহর থেকে আসা বিশ^বিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘আমরা প্রতিদিন শহর থেকে এসেই ক্লাস করি। তাই প্রায় দিনই দুপুরের খাবার বিশ^বিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়াতে অথবা ক্যাম্পাসের সামনের হোটেলগুলোতেই খেতে হয়। তবে আমাদের ক্যাফেটেরিয়া থেকে যতটুকো সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা আদৌ তা পাচ্ছি না। তাই বাধ্য হয়ে ক্যাম্পাসের সামনের হোটেলগুলোতে চড়া দামে খাবার খেতে হচ্ছে। যেখানে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের জন্য প্রতিযোগিতা থাকার কথা সেখানে দিন দিন শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ক্যাফেটেরিয়ার দিকে নজর দেওয়া।’
এদিকে ক্যাফেটেরিয়ায় শিক্ষকদের জন্য আলাদা খাবার কক্ষটিতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিয়মিত আড্ডা দেয় বলে সেখানেও নেই শিক্ষকদের আনাগোনা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একদিকে ক্যাফেটেরিয়ার পরিবেশ ভালো না আবার আমরা নিজেরাও যে একটু বসবো এর সুযোগ নেই। শিক্ষকদের জন্য আলাদা কক্ষ থাকলেও সেখানে গিয়ে নিজেদেরই বিব্রতকর অবস্থায় পরতে হয়।’
ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার মহিউদ্দিন মজুমদার এ বিষয়ে বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়ার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও কোন সমস্যার সমাধান করছে না তারা। শুধু আশ^াসই দিয়ে যাচ্ছে তারা। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ট্যাংকির পানির মাধ্যমে ক্যাফেটেরিয়ার পানির চাহিদা মেটাতে হয়। এবিষয়ে কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘ক্যাফেটেরিয়ায় পানি, বৈদ্যুতিক ও ব্যবস্থাপনা সমস্যাগুলো আগামী সপ্তাহে ই সমাধানের ব্যবস্থা করছি। খাবারের মানোন্নয়নসহ অন্যান্য বিষয়ে আমরা ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজারকে চাপ দিব। এছাড়া ক্যাফেটেরিয়া পরিচালনার জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নিয়ে দ্রুত একটি কমিটি গঠন করব।’