দামি জমি দেখলেই দখলের লোভ জাগে কুমিল্লা বিজয়পুর ইউপি চেয়ারম্যানের!
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর ইউনিয়নের গাবতলী গ্রাম। গ্রামটির ওপর দিয়ে যাওয়া গাবতলী-জেলখানা বাড়ি সড়কের পাশের সব জমিতে এখন দোল খাচ্ছে সোনালি ধান। তবে গ্রামটির কাঞ্চন মিয়ার বাড়ির সামনে সড়ক লাগোয়া প্রায় এক একর জমিতে ফসল নেই। পুরো জমি ভরে আছে ঘাসে।
অভিযোগ রয়েছে, একটি নিরীহ পরিবারের ওই ফসলি জমি দখল করে রেখেছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। গতকাল শনিবার ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে ওই গ্রামের কাঞ্চন মিয়া, তাঁর ছেলে মনির হোসেনসহ বেশ কয়েকজন নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
এ ছাড়া এ ঘটনায় গত ২৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান ও তাঁর ভাই মোতাব্বির হোসেন নাছিরের বিরুদ্ধে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী মনির হোসেন।
শুধু এই পরিবারই নয়, ওই গ্রামের আরো কয়েকটি পরিবার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলেছে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, দামি জমি দেখলেই জবরদখলের লোভ জাগে চেয়ারম্যানের।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তানভীর হোসেন পারভেজ। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদকের পদে রয়েছেন।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে মনির হোসেন বলেন, ‘প্রায় এক একরের ওই ফসলি জমি শত বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি।
প্রায় ১০ বছর আগে এই জমির দিকে নজর পড়ে চেয়ারম্যান পারভেজের। আমরা জমিতে গেলেই তাঁর লোকেরা হামলার চেষ্টা চালায়। প্রাণভয়ে বছরের পর বছর ধরে জমিটি অনাবাদি রাখছি।’
মনির হোসেন অভিযোগ করেন, ‘আমাদের আরো সম্পত্তি জবরদখল করে রেখেছেন চেয়ারম্যান। আমাদের জমির গাছের ডালপালা কাটতে গেলেও তাঁর বাহিনী বাধা দেয়।
চেয়ারম্যান ওই জমি কিনেছেন দাবি করলেও ১০ বছরে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। জমির সব কাগজপত্র ও খতিয়ান আমাদের নামে।’
ভুক্তভোগী কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘জমি নিয়ে যেন কথা না বলি এ জন্য চেয়ারম্যান বিভিন্নভাবে আমাদের মামলায় ফাঁসাচ্ছেন। গত ১৩ এপ্রিল তাঁর বাহিনী আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমার ছোট ছেলে সুমনকে তুলে নিয়ে গিয়ে শারীরিক নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে মোটরসাইকেল চোরের অপবাদ দিয়ে ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।’
কাঞ্চন মিয়া বলেন, ‘আমার ছেলে বাদী হয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করলেও প্রতিকার মেলেনি। আর থানা পুলিশ চেয়ারম্যানের ভয়ে আমার অভিযোগও নেয় না। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়ে এমন অপকর্ম করলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?’
ওই গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন নান্টু বলেন, ‘আমার পরিবারকেও এলাকা থেকে উচ্ছেদ করতে চায় তারা। বিভিন্ন সময় আমার বিরুদ্ধে ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৮টি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।’
দেলোয়ার হোসেন নামের আরেক বৃদ্ধ বলেন, ‘পুরো গ্রামটাই চেয়ারম্যান পরিবারের কাছে জিম্মি। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললেও শুরু হয় নির্যাতন আর হয়রানি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা তানভীর হোসেন পারভেজ। তিনি বলেন, ‘ওই জমি পাওয়ারমূলে আমিসহ কয়েকজন মালিক। এর আগে এটি মনির হোসেনদের পারিবারিক সম্পত্তি ছিল। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার আগ থেকেই ওই জমি অনাবাদি। আমি তাদের কখনো হয়রানি বা জমি জবরদখল করিনি। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে বিরোধ চলছে।’
এলাকার কাউকে হয়রানির অভিযোগও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান পারভেজ। তিনি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি বা দলীয় প্রভাবে কাউকে হয়রানি করেছি, তার একটি প্রমাণ দিতে বলেন। জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর কারো সম্পত্তি দখল তো দূরের কথা, এক শতক জমিও কিনিনি।’
এ প্রসঙ্গে জানতে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানকে একাধিবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র অভিযোগপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ