বুড়িচংয়ে ভোটের লড়াই ছাড় দিতে রাজি নয় কেউ কাউকে
ডেস্ক রিপোর্টঃ বুড়িচংয়ের উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটের লড়াই জমে উঠেছে, ছাড় দিতে রাজি নয় কেউ কাউকে। ঘনিয়ে আসছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটের দিন। প্রতিশ্রুতি আর জনসংযোগের প্রতিযোগিতা চলছে প্রার্থীদের মাঝে। চতুর্থ ধাপের ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের বাকি আর মাত্র ১০দিন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি নেই ভোটের মাঠে। ভোটারদের মাঝে তেমন কোন আগ্রহের দেখা মেলেনি এখনো। কুমিল্লার যেসব উপজেলাগুলোতে ভোট হবে সেসব এলাকার সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের ব্যাতিক্রমী মতামত। অনেকেরই দাবী “এক দলেরই লোক, মার্কা ভিন্ন ভোট দিলেই কি না দিলেই বা কি। তারাই তো জয়ী হবে”। ইতিমধ্যে কুমিল্লার ৫টি উপজেলায় নৌকার একক প্রার্থী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হয়েছেন তারা।
কিছুটা ব্যাতিক্রম দেখা যাচ্ছে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলায়। নেতাকর্মীদের আলোচনা সমালোচনা, মামলা হামলা ও প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ। প্রধান বিরোধীদল না থাকলেও এখানে আওয়ামীলীগের বিরোধী আওয়ামীলীগ। এ উপজেলায় আ.লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকে উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক এড. আবুল হাসেম খাঁনের প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউ পি চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার।
এ উপজেলার রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দুজনেই আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সমান প্রভাবশালী। উপজেলাার রাজনীতিতে পরিচ্ছন্ন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ দু’জনই।
ওকালতি পেশায় সম্পৃক্ত থাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে বিগত দিনে কিছুটা দুরত্ব থাকলেও, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা জেলা দঃ আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন স্বপন ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রেজাউল করিম এর সরাসরি সমর্থন ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে সেই দুরত্ব কাটিয়ে উঠেছেন অনেকটাই। তা ছাড়া আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক ও রয়েছে মুখ্য হিসেবে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এড.হাসেম খান ছুটছেন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। প্রতিদিনই একাধিক মিছিল মিটিং জনসংযোগে ব্যাস্ত সময় পার করছেন তিনি ও তার সমর্থকরা।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু’র ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেব পরিচিত মরহুম বাশার চেয়ারম্যানের পুত্র ময়নামতি ইউনিয়ন পরিষদের দু’বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান আখলাক হায়দার ও থেমে নেই। দলীয় মনোনয়ের আশায় দীর্ঘদিন ধরেই আ.লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম সহ নেতাকর্মী ও উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলেন সরব। দলীয় মনোনয়ন বঞ্চত এ নেতা উপজেলার তৃণমুল নেতাকর্মীদের বিশাল একটি অংশ সহ বেশকিছু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অনুরোধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। রাজনৈতিক কারনেই নৌকা ও আওয়ামীলীগ বিরোধীদের জোড়ালো সমর্থন তিনিই পাচ্ছেন। এছাড়াও আখলাক হায়দারের ছোট দুই ভাইয়ের একজন কুমিল্লা জেলা পরিষদের সদস্য হাজী মোঃ তারেক হায়দার এবং ময়নামতি ইউনিয়নের দু’বারের নির্বাচিত বর্তমান চেয়ারম্যান লালন হায়দার, বুড়িচংয়ের রাজনীতিতে তাদেরও প্রভাব এবং জনপ্রীয়তা রয়েছে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন তিনি, জয়ী হয় বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান। আওয়ামীলীগের তৃণমুল নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশের সমর্থনপুষ্ট এ প্রার্থী নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছের উপজেলার ৯টি ইউনিয়ের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। নির্বাচনী সভা, সমাবেশ, মিছিল ও মিটিংয়ে রাতদিন পার করছেন ব্যাস্ততায়।
বিএনপি জোট নির্বাচনে অংশ না নিলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে ভোটের উত্তাপ ভালই ছরিয়েছে এ অঞ্চলে । উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী দুই নেতার প্রার্থীতার কারনে দলের নেতাকর্মীরা এখন অনেকটাই দুই ভাগে বিভক্ত বলা যায়। ইতিমধ্যে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে কয়েকবার হামলা, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দেখা গেছে পাল্টাপাল্টি শোডাউন ও মিছিল। সংঘর্ষের এসব ঘটনায় থানায় মামলাও হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহ না থাকলেও চায়ের দোকানের রাজনৈতিক আলাপে ভোটের হিসাব কষছেন এলাকার অনেকেই। রাজনীতির সাথে জড়িত ছোট বড় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মাঝে এ নির্বাচন নিয়ে রয়েছে ব্যাপক আগ্রহ। চেয়ারম্যান প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের প্রচার প্রচারণারও কমতি নেই। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ মাইকিং, পোষ্টার ব্যানার দেখেই তা বোঝা যায়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ থানা পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে , শতভাগ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ ভাবে ভোট গ্রহণ সহ ভোটারদের শান্তিপূর্ণ ভোট দান নিশ্চিত করতে যা যা করা প্রয়োজন সকল ব্যবস্থা গ্রহনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা বা কারচুপি করার কোন সুযোগ নেই। ভোটের শান্তি বিঘ্নিত বা বিশৃঙ্খলার কোনরুপ চেষ্টা করলে সে যেই হোক না কেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা রয়েছে ওপর মহলের। প্রতিটি কেন্দ্রেই থাকবে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা।
সুষ্ঠ ভোটে প্রার্থীদের সকলেই নিজেদের জয়ের ব্যাপারে সমান ভাবে আশাবাদী। আওয়ামীলীগ বনাম নৌকা কিংবা আওয়ামীলীগ বনাম আওয়ামীলীগের এ লড়াইয়ে কে হচ্ছেন বুড়িচং উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান? আর এটি জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ৩১শে মার্চ বিকেল পর্যন্ত।