কুমিল্লা হেরেছে মাঠের বাইরে !
ডেস্ক রিপোর্টঃ বিপিএল মানেই যে ‘বিশৃঙ্খল প্রিমিয়ার লিগ’ নয়, এবার সেটি প্রায় প্রমাণ হয়েই যাচ্ছিল! কিন্তু শেষ দিকে এসে তা আর হলো না। মাঠের খেলা ছাপিয়ে আলোচনায় সেই অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, হট্টগোল!
ঝামেলা যে একটা হবে, সেটি আঁচ করা যাচ্ছিল শেষ চারের লড়াইয়ের আগে। বৃষ্টির পূর্বাভাস জেনে শেষ চারের প্রতিটি দলকেই রিজার্ভ ডে রাখার প্রস্তাব দিয়ে চিঠি দিয়েছিল বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। প্রস্তাবটা একবাক্যে প্রত্যাখ্যান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস। টুর্নামেন্টের আগের নিয়ম (প্লেয়িং কন্ডিশন) অনুযায়ী, কোনো কারণে এলিমিনেটর বা কোয়ালিফায়ার ম্যাচগুলোর কোনোটি না হলে বেশি পয়েন্ট পাওয়া দল চলে যাবে পরের ধাপে। পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা কুমিল্লা স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ ডের প্রস্তাব মানতে চায়নি।
এমন রিজার্ভ ডের প্রয়োজনের কথা বিপিএলের নীতিনির্ধারকেরাই বা আগে কেন ভাবলেন না? আজ আবার শুরু হয়েছে খেলা। দর্শকেরা এক টিকিটে ‘দুই খেলা’ দেখার সুযোগ পেলেন। মাঠের খেলা দিয়েই নির্ধারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হলো কে যাবে ফাইনালে। এর সবই ইতিবাচক দিক। কিন্তু লিখিত নিয়ম কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদলে ফেলার এই দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য অবশ্যই কলঙ্কের।
এরই মধ্যে বিপিএলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ এনে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিসা কামাল, দলটির অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। আজ চিঠির জবাব দেওয়ার শেষ দিন। জানা গেছে, অভিযোগের যথোপযুক্ত জবাব দিতে না পারলে বিপিএল থেকে বহিষ্কার করার হুমকি দেওয়া হয়েছে কুমিল্লাকে!
বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের এই চিঠিতে নাফিসা কামাল কতটা হতাশ, সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর পোস্ট দেখেই বোঝা যায়, ‘বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে শুধু মাঠের ৬টি দলের বিপক্ষে লড়তে হলে তো ভালোই হতো। আমি নিজে, আমার অধিনায়ক ও কোচের বিরুদ্ধে টুর্নামেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের অভিযোগ উঠেছে, যে টুর্নামেন্ট কিনা বাংলাদেশে চালু করেছিল আমার বাবা (আ হ ম মুস্তফা কামাল)। চিঠির জবাব দেওয়ার শেষ তারিখ আগামীকাল (আজ)। কাল (আজ) আমরা অবশ্য কোয়ালিফায়ারও খেলব। অথচ কর্তিত সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আমরা ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছিলাম।’
নাফিসা আরও একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে দেখা যাচ্ছে মুস্তফা কামালের সঙ্গে কথার লড়াই চলছে বিসিবির শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লিখেছেন, ‘ছবিটার ক্যাপশন দিন। কুমিল্লার জন্য একজন লড়াই করছে। কিন্তু ‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে/ নইলে মোদের রাজার সনে মিলব কী স্বত্বে’।
সবই স্বার্থের দ্বন্দ্ব! স্বার্থের জন্য বিপিএলে স্বতঃসিদ্ধ বলে কিছু নেই। এখানে যদি আপনার হাতে ক্ষমতা থাকে, মাঠের বাইরের খেলায় আপনার পক্ষেও জেতা সম্ভব! এক দিক দিয়ে ভালোই হলো। বাংলাদেশের ক্রিকেটে নিয়ম ব্যাপারটাই কতটা অনিয়মে পরিণত হয়েছে, তা খোলাখুলি সবার সামনে প্রকাশ্য হয়ে গেল। অতীতে আড়ালে এমন অনেক কিছু হয়নি, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে কি? ভবিষ্যতে এ ঘটনার সূত্র ধরে আরও অনেকে অনেক কিছু করতে যে চাইবে না তাঁর স্বার্থরক্ষায়, সেই নিশ্চয়তাই বা কে দেবে?
এ রকম ক্ষমতার কাটাকুটি খেলায় টেনে আনা হলো বাংলাদেশের ক্রিকেটকে! বিপিএল দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের শনৈঃশনৈঃ উন্নতির ঢোল বাজানো এবার বন্ধ হবে কি?
সূত্রঃ প্রথম আলো