কুমিল্লায় বারো হাজার গ্রাহকের চুলোয় গ্যাসের আগুন জ্বলে না
সাদিক মামুনঃ গ্যাস সঙ্কটে নাভিশ্বাস উঠেছে কুমিল্লার অন্তত ১২ হাজার আবাসিক গ্রাহকের। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে চুলোয় গ্যাসের প্রেসার না থাকার কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না কুমিল্লা বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) কর্মকর্তারা। গত সোমবার ও আগেরদিন রোববার বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চুলোয় গ্যাসের প্রেসার না থাকায় রান্না-বান্নার কাজে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পরিবারগুলোকে। অনেক পরিবার সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার বাইরে থেকে কিনে এনে সেরেছেন। প্রতিমাসে বিল পরিশোধের পরও গ্যাসের এ ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সকালের নাস্তা ও রান্নার সময়ে চুলোয় গ্যাসের প্রেসার না থাকায় কুমিল্লা শহর ও শহরতলীর এসব গ্রাহকরা বিকল্প ব্যবস্থায় কেরোসিনের চুলো বা সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহার করে অতিরিক্ত অর্থ গচ্ছা দিয়ে দিন পার করছেন।
চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস না পাওয়ায় আবাসিক গ্রাহকরা কিছুটা গ্যাস সঙ্কটে ভুগছেন- কুমিল্লার বিজিডিসিএল কর্মকর্তাদের এমন মন্তব্যের সাথে মিল নেই আবাসিক গ্রাহকের চুলোয় গ্যাস চলে যাওয়া ও আসার ঘটনায়। কেননা কুমিল্লায় কিছু এলাকায় গত ৫/৬ বছর ধরে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের আগে পরে গ্যাস চলে যাওয়া ও আসার সঙ্গে চাহিদার সম্পর্ক নেই। আবাসিক গ্রাহকদের মতে এসমস্যা বিজিডিসিএলের কারিগরি সমস্যা। যা সমাধানে আন্তরিকতার অভাব রয়েছে কর্মকর্তাদের। গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ জানান, প্রতিদিন সকাল ৭টা-৮টায় চুলোয় গ্যাসের প্রেসার পুরাপুরি কমে যায়। বেলা ২টা-৩টার সময় আসে। আবার সন্ধ্যায় প্রেসার কমে যায়। ফের আসে ৯টার দিকে। সাংসারিক এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গ্যাসের প্রেসার না থাকায় চরমে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। কুমিল্লা শহরের চাঁনপুর, শুভপুর, চকবাজার, মোগলটুলি, সংরাইশ, নবগ্রাম, নলুয়াপাড়া, সুজানগর, পাথুরিয়াপাড়া, নুরপুর, তেলিকোনা, বাগিচাগাঁও, রেইসকোর্স, বিষ্ণুপুর, ছোটরা, অশোকতলা, কালিয়াজুরি, পুলিশলাইন, ভাটপাড়া, টমছমব্রীজ, আশ্রাফপুর, শাকতলা এবং চৌয়ারা, বুড়িচংয়ের ময়নামতি, রামপুর ও সদরের পাঁচথুবির মাঝিগাছা এলাকায় ভোর থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চুলোয় গ্যাসের প্রেসার ছিল না। একই অবস্থা গতকাল সোমবারও বিদ্যমান ছিল। চাঁনপুর এলাকার গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, সকালে পাউরুটি, দোকানের পরটা কিনে নাস্তা সারতে হয়েছে। দুপুরে হোটেলের ভাত খেতে হয়েছে। এভাবে কী জীবন চলে ? অনেক গ্রাহক জানান, প্রতিমাসে বিল দিচ্ছি, বিল বাকি পড়লে নোটিশ আসে বা সংযোগ বিচ্ছিনের জন্য বাখরাবাদের লোকজন দলবেঁধে আসেন। কিন্তু চুলোয় যখন গ্যাস থাকে না তখন কেউ এসে এই দুর্ভোগ দেখে না। প্রতিদিন কম করে হলেও ৮০টাকার কেরোসিন খরচ হয়। প্রতিমাসে একটি পরিবার কেরোসিনের পেছনে প্রায় ২৫০০ টাকা বাড়তি খরচ করছে। সাথে নির্ধারিত অঙ্কের গ্যাস বিলও পরিশোধ করছে।
এদিকে প্রতিমাসে গ্যাস পরিশোধের পরও কুমিল্লা শহর ও শহরতলীর অন্তত ১২ হাজার গ্রাহকের চুলোয় গ্যাস না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় রান্নার জন্য প্রতিদিন কেরোসিনের চুলোর পেছনে প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। আবার এসব গ্রাহকের অনেকেই রয়েছেন যারা বিকল্প ব্যবস্থায় সিলিন্ডার ব্যবহার করছেন। এভাবে গ্যাসের জন্য ভোগান্তি ও বিকল্প জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ও সিলিন্ডারের পেছনে বিপুল পরিমান অর্থ খরচে ভুক্তভোগী আবাসিক গ্রাহকরা আর্থিক দন্ডের মুখে পড়েছেন। এভাবে রিতীমত গ্যাস না পাওয়া এবং বিকল্প ব্যবস্থায় প্রতিদিন বাড়তি খরচে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকার আবাসিক গ্রাহকদের গ্যাস সঙ্কট বিষয়ে কথা বলার জন্য বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের (বিজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল ইসলাম খানকে রবিবার সন্ধ্যায় একাধিকবার তার দাপ্তরিক মুঠোফোন নম্বরে কল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে গ্যাস সঙ্কটের বিষয়ে বাখরাবাদের একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কিছু এলাকায় চুলোয় গ্যাস না থাকার সমস্যাটা কয়েক বছর ধরেই চলছে। এটা কেন হচ্ছে বুঝা যাচ্ছে না। তবে চাহিদা অনুযায়ি গ্যাস না পাওয়ায় হয়তো এমনটি হচ্ছে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক