কুমিল্লা দঃ জেলা আ. লীগের পদ পেল বিএনপি-জামাত ও জাসদ নেতারা!
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সদ্য ঘোষিত কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার পরেই এই কমিটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ আছে, যুদ্ধাপরাধীর ছেলে, ছাত্র শিবিরের ক্যাডার, হত্যা মামলার আসামি, জাসদ নেতা, বিএনপি নেতা, ফ্রিডম পার্টির সদস্যদের কমিটিতে রাখাসহ স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে।
ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের কমিটিতে রাখার অভিযোগে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর গত ১২ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন পদবঞ্চিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৯ এপ্রিল কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা দেখতে পেলাম আমার মতো আরও অনেকেই বাদ পড়েছেন। যারা গত ৩ দশকের অধিক সময় আওয়ামী লীগের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার স্থানীয় রাজনীতিতে নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। অথচ তারা পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছেন। একজন সদস্য হিসেবেও তাদেরকে রাখা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে অভিযোগকারী নেতাকর্মীরা বলেন, ‘আপনি বলেছিলেন, একজন একাধিক পদে থাকতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেছে বর্তমান কমিটিতে অনেকেই আছেন যারা একাধিক পদে আছেন। এমনকি অন্য সহযোগী সংগঠনে পদ থাকার পরেও এখানে তাদেরকে পদ দেওয়া হয়েছে। এমন লোককেও স্ব-সম্মানে স্থান দেয়া হয়েছে যার বাবা যুদ্ধাপরাধী ও খুনি। এছাড়াও রয়েছে শিবির নেতা, বিএনপি নেতা, ফ্রিডম পার্টির নেতা, খুনের মামলার আসামি।’ লিখিত অভিযোগের সঙ্গে বিতর্কিতদের একটি তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে।
পদবঞ্চিত স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া সামসু উদ্দিন কালুর বাবা আকবর আলী একজন যুদ্ধাপরাধী, ১৯৭১ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা কলিমুল্লাহকে হত্যা করেন। অন্নদা, যশোদা, জগবন্ধুদের জমি আত্মসাৎ করেন। তার জন্য লাকসাম থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর- ১৮/১৯৭২। তিনি বিএনপি, জাতীয়পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে আসেন।
সহ-সভাপতি এ.এম শাহাদাত হোসেন (তসলিম), যিনি আওয়ামী যুবলীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে আছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন (স্বপন), যিনি বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা পলাশ হত্যার অন্যতম আসামি ছিলেন। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থী রিয়ার এডমিরার এম.এ তাহেরের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু তাকে কোনো শাস্তি তো দেয়া হয়নি। উপরন্তু তাকে জেলা আওয়ামী লীগের পদ দেয়া হয়েছে।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী দত্ত। তিনি মহানগরের বাসিন্দা অথচ তাকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন করা হয়েছে। প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খালেদ আহমেদ তালুকদার (চঞ্চল), তিনি চাঁদপুরের বাসিন্দা। তাকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন করা হয়েছে।
সাংগঠনিক সম্পাদক রুপম মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক আবদুস সালাম বেগ, আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত নন, তাদেরকেও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে রাখা হয়েছে। সদস্য এমরানুল হক কামাল (ভার্ড কামাল), একজন হাইব্রিড নেতা। তিনি জামায়াত সমর্থিত লোক। কিন্তু তাকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে পদায়ন করা হয়েছে।
গোলাম সারোয়ার সদর দক্ষিণ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যানের পদে আসীন আছেন। তাকেও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর আপন ভাই।
এছাড়া আবদুল হামিদ, মো. কামাল উদ্দিন, এ বি এম এ বাহারসহ বেশ কয়েকজন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে স্থান পেয়েছেন। এদের নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের ৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এতে সভাপতি করা হয় আ হ ম মুস্তফা কামালকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. মুজিবুল হককে। সম্মেলনের চার মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়েছে।
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা খন্দকার শরীফ বলেন, ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাদ দিয়ে যারা জীবনে আওয়ামী লীগ করেনি তাদেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে রাখা হয়েছে। ২০০১ সালে যেসব বিএনপির লোকজন আওয়ামী লীগের নেতাদের অত্যাচার করেছে, মারধর করেছে, তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে।
কুমিল্লা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জাফর চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগে রাজাকার ও বিএনপি জামায়াতের লোকজন ঠাঁই পেয়েছে। কিন্তু ত্যাগী নেতাকর্মীরা এই কমিটিতে রাখা হয়নি। এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বরাবর লিখিতি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমরা একটি সংবাদ সম্মেলন করবো।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক বলেন, আমাদের কমিটিতে কোনো রাজাকারের পুত্রকে জায়গা দেওয়া হয়নি। এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন।
দুই পরিবারের ছয় সদস্য এই কমিটিতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে মুজিবুল হক বলেন, ‘যারা যোগ্য তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। আমার ভাতিজারা যোগ্য, তারা অ্যাডভোকেট, তাই তাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে। কমিটি হয়েছে ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট। কিন্তু আবেদন করেছে ৫০০ জন। এদের সবাইকে তো কমিটিতে রাখা সম্ভব না।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মানিত সভাপতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং সাধারণ সম্পাদক, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক একমত হয়ে প্রস্তাবিত জেলা কমিটি গঠন করে কেন্দ্রে জমা দিয়েছেন। সভাপতি মহোদয় একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি এবং সাধারণ সম্পাদক রাজপথ থেকে গড়ে ওঠা একজন পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ। তাদের প্রতি অবিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তারা যেভাবে কমিটি দিয়েছেন সেখানে কেবলমাত্র একজন সাবেক ছাত্রনেতার নাম যুক্ত করা হয়েছে তাদের সম্মতিতে।
মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘রাজাকারের পুত্র এই কমিটিতে পদ পেয়েছে-এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’
সূত্রঃ ঢাকাটাইমস