‘গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি ওসি হতে পারতাম না’

কুষ্টিয়ার খোকসায় উপজেলা বিএনপির কর্মী সমাবেশে দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে গণ্ডগোল-হট্টগোলের ঘটনা ঘটলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মঞ্চে উঠে মাইকে কথা বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল ইসলাম। এসময় দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের শান্ত হওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করে উপদেশমূলক বক্তব্য দেন।

এতে হট্টগোল থামলেও রাজনৈতিক মঞ্চে ওসির বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে সমালোচনা। এ ঘটনার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈনুল ইসলাম কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য দেননি বলে দাবি করেছেন।

ওসি মইনুল বলেন, আমি কোনো বক্তব্য দেইনি। থানার ওসি হিসেবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সরকারি দায়িত্ব। আমি রাজনৈতিক বক্তব্য দেইনি। কর্মী সমাবেশে দু’পক্ষের গণ্ডগোল হচ্ছিল। পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য আমি মঞ্চের মাইকে কথা বলেছি। মাইকে সবাইকে শান্ত হওয়ার জন্য বলেছি। যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। মাইক ব্যবহার না করলে সবাই আমার কথা শুনতে পেতো না। এজন্য মাইক ব্যবহার করেছি।

তিনি আরও বলেন, সেদিন আমার অনুরোধে সবাই শান্ত হয়েছিল। পরে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনাও ঘটেনি। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়েছিল। আমি যে সময় কথা বলছিলাম সে সময় মঞ্চ ফাঁকা ছিল। সে সময় সমাবেশ শুরুও হয়নি। মঞ্চের অতিথি ও জেলা-উপজেলার সিনিয়র নেতারাও আসন গ্রহণ করেছিলেন না। আমি মাইকে কথা বলার বেশ কিছুক্ষণ পরে সমাবেশের মঞ্চে তারা আসেন।

গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে খোকসা জানিপুর সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। অতিথি ও জেলা-উপজেলার সিনিয়র নেতারা মঞ্চে বা সমাবেশে আসার আগে সমাবেশস্থলে স্থানীয় নেতাকর্মী জড়ো হতে থাকে। সাড়ে ১০টার দিকে দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। পরে পরিস্থিতি শান্ত ও স্বাভাবিক রাখার জন্য মঞ্চের মাইকে কথা বলেন খোকসা থানার ওসি।

ওসি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ১০টা ৪০ মিনিট থেকে ৪৫মিনিটের দিকে মঞ্চে উঠে বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার জন্য অনুরোধ করেন। সমাবেশের মাইকে ৩ মিনিট ১৬ মিনিট কথা বলে সবাইকে শান্ত করে ওসি মঞ্চ ছাড়েন। সে সময় মঞ্চে অতিথি ও জেলা-উপজেলার নেতারা উপস্থিত ছিলেন না। ওসি মাইকে কথা শেষ করার প্রায় আধা ঘণ্টা পরে অতিথি ও জেলা-উপজেলার নেতারা মঞ্চের আসন গ্রহণ করেন। পরে স্বাভাবিক পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ হয়।

সমাবেশের মাইকে ৩ মিনিট ১৬ মিনিটে ওসি মঈনুল ইসলাম বিএনপি দু’পক্ষের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‌‘এটা আপনাদের দলীয় প্রোগ্রাম। এখানে আমার কথা বলা উচিত না। তারপরও দুইটা কথা বলি। আপনারা দুই মিনিট শোনেন, বিনীত অনুরোধ করি দুইটা মিনিট কথা শুনেন। কেউ চিল্লায়েন না। গত ১৫-১৬টা বছর কোথায়-কীভাবে ছিলেন আপনারা, আমার চেয়ে আপনারা ভালো জানেন। আপনারা ঠিকমতো বাড়িতে থাকতে পারেননি। আমি পুলিশ, এখানে হয়তো অন্য আরেকজন ছিল, আমাকে বাধ্য করেছে। হয়তো আপনারা আমাকে দেখে বলছেন, এ বড় বড় কথা বলে। আসলে না, আমিও ছিলাম, ওরকম নির্যাতিতই ছিলাম। ৫ তারিখের এই গণঅভ্যুত্থান না হলে আমি আজ এই থানার ওসি হতে পারতাম না। এটা আমি সবসময় বলি এবং স্বীকার করি। আমি আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ করি, আপনাদের অনেক কষ্টের ফলে, ত্যাগের পরে আজকে আপনারা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আজ ১৫ বছর পরে আপনারা যেমন এক জায়গায় একত্র হতে পারছেন, সবাই সবার সঙ্গে কথা বলতে পারছেন, তেমন আপনাদের জেলার নেতারাও সবাই আসছে এখানে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, যে সুযোগটা এসেছে, সেটার সৎ ব্যবহার করেন। আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আপনাদের মধ্যে থেকে তৃতীয়পক্ষ সুযোগ নেবে। সবাইকে বিনীত অনুরোধ করি। এই প্রোগ্রাম আপনাদেরই। আমি কেন পুলিশ হয়ে আসব। তারপরও আসলাম। আমার থানার সামনে, আসতে হবে, মনও চায়, কিন্তু সব জায়গায় সব কথা বলা যায় না।

‘আপনাদের কাছে আমি বিনীত অনুরোধ করি, কেউ কোনো ঝামেলা করবেন না। যারা লাঠি নিয়ে এসেছেন, তারা পতাকাটা নেন, আর লাঠিটা একপাশে রাখেন। আপনাদের প্রোগ্রাম, আপনাদেরই দল। আমি বারবারই অনুরোধ করি, কেউ কোনো ঝামেলা করবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ হোক। এজন্যই আপনারা এসেছেন, আর আমরা আপনাদের সেবা দিতে এসেছি। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব। আপনাদের নেতারা একটু পরেই স্টেজে আসবেন। আপনারা প্লিজ শান্ত থাকবেন। সব হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যান। আপনাদের মধ্যে হিংসা থাকলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে, এই সুযোগ দেওয়ার দরকার নেই। আপনারা দয়া করে এই সুযোগ দেবেন না। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ওসি দুইহাত তুলে বলেন, আপনারা ঝামেলা করবেন না তো? তখন উপস্থিত নেতাকর্মীরা ওসিকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে, তারা কোনো ঝামেলা করবেন না।

প্রসঙ্গত, খোকসা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আমজাদ আলী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ, সদস্য সচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকারসহ দলটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন