কুমিল্লা অঞ্চলের বিদ্যুৎ সঞ্চালন সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ
ডেস্ক রিপোর্টঃ বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিশ্চিত করতে পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে এক হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা।
এ সংক্রান্ত “পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন ও ক্ষমতাবর্ধন” শীর্ষক একটি প্রকল্প মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।
এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে এ প্রকল্পসহ ১৭ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ের ১৫টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে প্রায় ৫২৪ কোটি টাকা এবং প্রকল্প সহায়তা খাত থেকে পাঁচ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা যোগান দেওয়া হবে।
বৈঠকের পর অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বিদ্যুৎ গ্রিডের সক্ষমতা বাড়ানোর প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, “মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। এই বিপুল অতিরিক্ত বিদ্যুৎ চাহিদা অনুযায়ী গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিতে হলে সঞ্চালন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হবে।
“বিদ্যুৎ আমাদের লাইফলাইন। ছোট-বড়-মাঝারি যেকোনো ধরনের শিল্পায়নের জন্য বিদ্যুৎ দরকার। আবাসিক খাতে বিদ্যুতের দরকার। কিন্তু যে পরিমাণ বিদ্যুৎ আমাদের জাতীয় গ্রিডে রয়েছে, সঞ্চালন ব্যবস্থার ক্রুটির জন্য তার সবটুকু গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানো যাচ্ছে না।”
মন্ত্রী বলেন, দেশের রাস্তাঘাট নষ্ট হলে তা দ্রুত মেরামত বা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়ন যখন ইচ্ছা করা যায় না। পরিকল্পিতভাবে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। তাই দেশের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার চাহিদা পূরণে ‘পূর্বাঞ্চলীয় গ্রিড নেটওয়ার্কের পরিবর্ধন ও ক্ষমতাবর্ধন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়েছে।
“আমরা বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়িয়েছি তিনগুণ, আর সঞ্চালন ব্যবস্থা বেড়েছে দুই গুণ। এখন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি সঞ্চালন ব্যবস্থার সক্ষমতাও বাড়ানো হবে।”
অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্প:
পটুয়াখালী ১৩২০ মেগাওয়াট সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন ও সংরক্ষণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮১৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প; ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
রংপুর অঞ্চলে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন ও সেচ দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
বন্যা ও দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প; এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৭৮৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ৩২টি পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন প্রকল্প; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন নবসংযুক্ত নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও, ডেমরা ও মান্ডা এলাকার সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
কালুখালী ভাটিয়াপাড়া সেকশন পুনর্বাসন এবং কাশিয়ানী-গোপালগঞ্জ-টুঙ্গিপাড়া নতুন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প; এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ১১০ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পার্বতীপুর হতে কাউনিয়া পর্যন্ত মিটারগেজ রেলওয়ে লাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্প; এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি ২১ লাখ টাকা।
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের জন্য বিভিন্ন বিওপির পরিসীমা বরাবর কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (বরিশাল জোন) প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। জামালপুর-চেচুয়া-মুক্তাগাছা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণ প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৮ লাখ টাকা। শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, গাজীপুর প্রকল্প; এর ব্যয় ৯২৪ কোটি ৬ লাখ টাকা। বাংলাদেশ বীমা খাত উন্নয়ন প্রকল্প; এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৩২ কোটি টাকা।