কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিরুদ্ধে নম্বর টেম্পারিংয়ের অভিযোগ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসের বিরুদ্ধে থিসিস পেপারের ভাইভা বোর্ডে এবং সেমিস্টার ফাইনাল খাতায় নম্বর টেম্পারিং করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, স্নাতকে ভাল ফলাফলধারীরা স্নাতকোত্তর ২য় সেমিস্টারে থিসিস করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যেখানে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ৩.২৫ হলে শিক্ষার্থী তার পছন্দ শিক্ষকের অধীনে থিসিস করতে পারবেন। একজন শিক্ষককের অধীনে তিনজন শিক্ষার্থী এই পেপার করার নিয়ম রয়েছে। এতে স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বনানী বিশ্বাসের অধীনে ৩ জন, অধ্যাপক ড. এমএম শরীফুল করিমের অধীনে ২জন, সহকারী অধ্যাপক আবুল হায়াতের অধীনে ৩ জন ও সহকারী অধ্যাপক শারমীন সুলতানার অধীনে ২ জনসহ মোট ১২জন থিসিস করেন।

এতে ফাইনাল ভাইভা বোর্ডে বনানী বিশ্বাস এবং শারমিন সুলতানার বিরাগভাজনের শিকার হয় আবুল হায়াত ও শরীফুল করিমের অধীনে থিসিস করা শিক্ষার্থীরা। হায়াত ও শরিফুলের অধীনে থিসিস করা শিক্ষার্থীদের ‘সি+’ ও ‘বি-’ গ্রেডে নম্বর দেয়া হয়, যেখানে বনানী ও শারমিনের অধীনে থিসিস করা ৫ জনই পেয়েছে ‘এ’ এবং ‘এ+’ গ্রেডে। এতে ফল বিপর্যয় ঘটে শিক্ষার্থীদের।

এর আগে স্নাতকোত্তর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের দুইজন শিক্ষার্থী ১ম সেমিস্টারে অন্যান্য কোর্সে ‘এ’ এবং ‘এ-’ পেলেও বনানীর কোর্সে পায় ‘বি’ ও ‘বি-’। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তারা যেন পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক পদে আবেদন করতে না পারে সেজন্য কোর্স শিক্ষক ইচ্ছেকৃত ভাবে নম্বর কমিয়ে দিয়েছেন। একই ব্যাচের দুইজন শিক্ষার্থী পরবর্তী সেমিস্টারে শরিফুল করীমের অধীনে থিসিস করায় নম্বর কমিয়ে দেয় বিভাগের বনানী ঘনিষ্টজন শিক্ষক শারমিন সুলতানা। ফলে তারা পেয়েছেন ‘বি-’। এটা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য না বলে জানান একাধিক শিক্ষকরা।

কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাম্বার টেম্পারিং হচ্ছে? এবিষয়ে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ছাত্র পরামর্শক ও নির্দেশনার পরিচালক ড. মোহাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, শিক্ষকদের দ্বন্দ্বের কারণে কেন শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে? এটা এক ধরণের অপরাধ। একজন শিক্ষকের নৈতিকতা থাকলে এই কাজ করা সম্ভব না।

স্নাতকোত্তর ২০১৯-২০ সেশনের এক শিক্ষার্থী বলেন, একাধিক সেমিস্টারে ১ম, ২য় হওয়ার শিক্ষার্থীরা কিভাবে ভাইবাতে ‘সি’ এবং ‘সি+’ পায়! আমরা রেজাল্ট প্রকাশ হওয়ার আগে জানতাম যারা বনানী ম্যামের অধীনে থিসিস করবে তারা ভাইভাতে ‘এ+’ বা ‘এ’ পাবে। রেজাল্ট প্রকাশের পর সেটাই হয়েছে। কারণ আমরা জানি তিনি পছন্দের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটা করেন।

ভুক্তভোগী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা অন্যান্য কোর্সে ভালো করলেও ম্যামের কোর্সে ভালো করতে পারিনা। কারণ ওনি নির্দিষ্ট কয়েকজনকে নম্বর দেয়। এছাড়া ওনার অধীনের থিসিস না করায় তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়। যার ফলে এর প্রভাব ফলাফলে দেখতে পাচ্ছি। বিভাগটির একাধিক শিক্ষকরা বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। শিক্ষকরা নম্বর টেম্পারিং করলে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠে। একজন শিক্ষকের নৈতিকতা থেকে এরকম কাজ করা উচিত নয়। শিক্ষার্থীরা যেকোনো শিক্ষকের অধীনে থিসিস করতে পারে। এটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। সেক্ষেত্রে কেন শিক্ষককের ব্যক্তিগত আক্রোশ শিক্ষার্থীদের ফলাফলের উপর পড়বে? এটা কোনভাবে কাম্য নয়।

তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নারাজ অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস। নিজের পদোন্নতি বোর্ডে নিজেই সভাপতিত্ব করা, সহকর্মী-শিক্ষার্থীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, শিক্ষার্থী দিয়ে বাজার করানো, বিশ্ববিদ্যালয়ে মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) আইন না মেনে একইসঙ্গে দুই পদে বহাল থাকাসহ নানা অভিযোগে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, আমি এবিষয়ে অবগত ছিলাম না। এখন যেহেতু জানলাম, শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিব। সেটা যেই হোক, প্রমাণ পেলে আমরা বিষয়টি দেখবো।

আরো পড়ুন