পশু কুরবানি ছাড়াই ঈদুল আজহা পালন করল নাইজেরিয়ার লাখ লাখ মুসল্লি
‘প্রতি বছরই আমি পবিত্র কুরবানিতে একটি পশু কুরবানি করি। ১৯৭৬ সাল থেকেই আমি এটা করি। কিন্তু এ বছর সম্ভব হয়নি। নাইজেরিয়া অনেক মুসল্লিদের অবস্থা এরকমই।’ কথাগুলো বলছিলেন ৭৮ বছর বয়সী মাললাম কবিরু টুডুন ওদা। দেশটিতে জীবন ধারণের খরচ বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় অনেক মুসল্লির পক্ষে এবার কুরবানি করা সম্ভব হয়নি। খবর বিবিসি
মহান আল্লাহ’র নির্দেশনা অনুযায়ী নবী ইব্রাহিম আ. এর দেখানো পথ অনুসারে পবিত্র কুরবানিতে বিশ্বের মুসলিম ব্যক্তিরা পশু কুরবানি দিয়ে থাকেন। নাইজেরিয়ার সবচেয়ে বড় শহর কানোতে বসবাস করেন ওদা। বিবিসিকে তিনি বলেন, প্রতিবছরই কুরবানিতে আমি একটি পশু কুরবানি দিয়ে থাকি। কিন্তু এবছর কুরবানি দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নাইজেরিয়ার এই শহরটিতে বেশিরভাগ মুসল্লিদের বসবাস।
এদিকে নাইজেরিয়ায় গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুরাবস্থা চলছে। এর ফলে অনেকের মাঝে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। দেশটিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। যা গত তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া খাবারের দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
দেশটিতে একটি ভেড়ার দাম ১ লাখ নায়রা বা ৬৩ ডলার। যা অনেকের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব নয়। ৬৬ বছর বয়সী আর এক নাইজেরিয়ান মাললাম আউয়াল ইয়াসাই বলেন, এ বছর কুরবানি দেয়ার জন্য একজনকে খুঁজছিলাম। কারণ একার পক্ষে একটি পশু ক্রয় করা সম্ভব নয়। তাই ভাগে কুরবানি দিতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত দুই জনে মিলে একটি উট কিনেছি।
ইমাম গারবা সকোতো বিবিসিকে বলেন, পবিত্র কুরবানিতে একজন মুসল্লি আল্লাহ’র রাস্তায় ভেড়া, ছাগল অথবা উট কুরবানি দিয়ে থাকেন। গারবা সকোতো বলেন, আল্লাহ’র নবী ইব্রাহিম আ. একদিন প্রিয় বস্তুকে কুরবানি দেয়ার স্বপ্ন দেখেন। এরপর তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় সন্তান ইসমাঈলকে কুরবানি দিতে যান। কিন্তু মহান আল্লাহ’র অশেষ মেহেরবানিতে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। এরপর থেকেই বিশ্বের মুসলিমরা কুরবানিতে পশু জবাই করে থাকেন।
তিনি বলেন, কারো যদি পুরো একটি পুশু কুরবানি করার সামর্থ না থাকে তাহলে সে সাত ভাগে একটি গরু কিংবা উট কুরবানি দিতে পারবেন। বর্তমানে নাইজেরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা এমন করুণ দশায় দাঁড়িয়েছে যে, দেশটির মানুষ শুধুমাত্র খাবারের সন্ধান করছে। তাদের কাছে এখন একটি পশু ক্রয় করা বিলাসিতার সামিল।
আগের বছরগুলোতে দেশটির পশুর বাজারগুলোতে অনেক ক্রেতা তাদের পছন্দ অনুযায়ী পশু ক্রয় করে নিয়ে যেত। কিন্তু এ বছর পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। বাজারে ভেড়া বিক্রি করতে আসা ইব্রাহিম বালারাবে ওমবাই বলেন, গত বছর আমি ১৫টি ভেড়া বিক্রি করেছি, কিন্তু এবার মাত্র ৭টি ভেড়া বিক্রি করতে পেরেছি।
নাইজেরিয়ার সরকার বলছে, তারা অর্থনীতিকে ভালো অবস্থার দিকে নিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির ১ কোটি ৫ লাখ দারিদ্র পরিবার জীবন ধারনের জন্য সরকারের কাজ থেকে ২৫ হাজার নায়রা বা ১৬ ডলার পাচ্ছে। তা দিয়ে জীবন ধারণ করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বছর অনেক নাইজেরিয়ান মুসলিম মসজিদে গিয়ে পরিস্থিতি উন্নতির জন্য দোয়া করেছেন। আগামী বছর তারা যেন একটি পশু কুরবানিসহ নতুন জামা কাপড়ও পড়তে পারেন সেই দোয়াও করেন।